কুমিল্লাজাতীয়দেশনোয়াখালীবাংলাদেশবিশ্লেষণমিডিয়াসংগৃহীত সংবাদ

‘কুমিল্লা বিভাগ’ গঠনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ, নোয়াখালী বিভাগের দাবি

গণশুনানি ছাড়া সিদ্ধান্তকে ‘অসাংবিধানিক’ বলছে সংগ্রাম পরিষদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘কুমিল্লা বিভাগ’ নামে নতুন প্রশাসনিক বিভাগ গঠনের সরকারি উদ্যোগের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ‘নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদ’। নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরসহ সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে কোনো ধরনের গণশুনানি ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়াকে ‘হঠকারী’ এবং সংবিধানের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে সংগঠনটি।

সোমবার এক বিবৃতিতে পরিষদের নেতারা অবিলম্বে ‘কুমিল্লা বিভাগ’ গঠনের কার্যক্রম বন্ধ করে বৃহত্তর নোয়াখালীর তিনটি জেলা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা নিয়ে ‘নোয়াখালী বিভাগ’ বাস্তবায়নের জোর দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে ‘কুমিল্লা বিভাগ’ গঠনের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর এই প্রতিক্রিয়া জানায় সংগঠনটি। বিবৃতিতে পরিষদের সভাপতি, সাংবাদিক সাইফুর রহমান রাসেল বলেন, “যেসব জেলা নিয়ে নতুন বিভাগ গঠন করা হবে, সেখানকার জনগণের মতামত না নিয়ে এমন একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া সরাসরি সংবিধানের ৭(১) ও ৭(২) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন, যেখানে জনগণকে সকল ক্ষমতার মালিক বলা হয়েছে।”

সংগ্রাম পরিষদের নেতারা অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কিংবা জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন— কেউই বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের জনগণের মতামত গ্রহণ করেনি। তারা আরও বলেন, “জুলাই সনদের ৮০ নম্বর ক্রমিকে কুমিল্লাকে বিভাগ করার যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।” তাদের মতে, একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জুলাই সনদকে বিতর্কিত করার জন্য এই বিষয়টি সনদে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট

উল্লেখ্য, ‘নোয়াখালী বিভাগ’ বাস্তবায়নের দাবি একটি পুরনো আন্দোলন। ১৯৯০ সাল থেকে ঢাকা ও নোয়াখালীতে এই দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। ২০১৫ সালে এই আন্দোলন আরও তীব্র হয় এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ও তিন জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একাধিক মানববন্ধন শেষে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছিল।

পরিষদের দাবি

সংগ্রাম পরিষদ সরকারের কাছে কয়েকটি সুস্পষ্ট দাবি জানিয়েছে:
১. নতুন বিভাগ গঠনের আগে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে গণশুনানির আয়োজন করে জনগণের মতামত নিতে হবে।
২. ‘কুমিল্লা বিভাগ’ গঠনের কার্যক্রম অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
৩. জুলাই সনদ থেকে বিভাগ গঠনের প্রস্তাবটি বাদ দিতে হবে।
৪. কুমিল্লাকে ঢাকা বিভাগের সঙ্গেই রেখে নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোকে নিয়ে ‘নোয়াখালী’ নামে দেশের ৯ম প্রশাসনিক বিভাগ ঘোষণা করতে হবে।

পরিষদের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জনগণের মতামতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এই একতরফা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button