দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ: এক দোয়ার তাৎপর্য

ইসলামিক ডেস্ক “রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানা, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানা, ওয়াক্বিনা আযাবান্নার।”— মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়া। এর সহজ অর্থ হলো: “হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে দুনিয়ার জীবনে কল্যাণ দান করুন, আখিরাতের জীবনেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন।” এই প্রার্থনার মাধ্যমে একজন বিশ্বাসী আল্লাহর কাছে ইহকাল ও পরকালে—উভয় জগতেই সাফল্যমণ্ডিত এক জীবনের জন্য আবেদন করেন।
কিন্তু কী এই ‘হাসানা’ বা কল্যাণ? ইসলামে ‘হাসানা’ শব্দটি ব্যাপক অর্থ বহন করে। আরবি ‘হুসন’ শব্দ থেকে এর উৎপত্তি, যার মানে সৌন্দর্য বা উত্তম অবস্থা। এটি শুধু বাহ্যিক বা জাগতিক সাফল্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর সঙ্গে নৈতিকতা, আধ্যাত্মিকতা এবং জীবনের সামগ্রিক মঙ্গল জড়িয়ে আছে।
পার্থিব জীবনের ‘হাসানা’
দুনিয়ার জীবনে যে বিষয়গুলো আমাদের শান্তি, সমৃদ্ধি ও সম্মান এনে দেয়, সেগুলোই পার্থিব ‘হাসানা’। এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো:
- সৎ উপার্জন: হালাল বা বৈধ উপায়ে অর্জিত জীবিকা দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কল্যাণ। এর মাধ্যমে অর্জিত সম্পদে বরকত থাকে এবং তা মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করে।
- উপকারী জ্ঞান: যে জ্ঞান নিজের ও সমাজের উপকারে আসে, তা অর্জন করা একটি ‘হাসানা’। ধর্মীয় জ্ঞানের মাধ্যমে পরকালের পথ আলোকিত হয়, আর জাগতিক জ্ঞানের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
- সুস্বাস্থ্য: সুস্থ শরীর ও মন আল্লাহর একটি বড় নিয়ামত। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, পরিমিত খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক স্থিরতা পার্থিব জীবনের জন্য অপরিহার্য কল্যাণ।
- সুসম্পর্ক: পরিবার, প্রতিবেশী ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন এবং সকলের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখা দুনিয়ার জীবনে শান্তি নিয়ে আসে।
পরকালীন জীবনের ‘হাসানা’
পরকালে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং জান্নাত লাভই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ‘হাসানা’। এই কল্যাণ অর্জনের ভিত্তি হলো ইবাদত ও সৎকর্ম।
- বিশুদ্ধ ঈমান: আল্লাহর একত্ববাদ, তাঁর প্রেরিত নবী-রাসূল, কিতাব, ফেরেশতা এবং আখিরাতের প্রতি অটল বিশ্বাস হলো পরকালীন সফলতার মূল ভিত্তি।
- ফরজ ইবাদত: আল্লাহর নির্দেশিত অবশ্যপালনীয় ইবাদত, যেমন—পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামাজ), রমজানের সাওম (রোজা), যাকাত এবং সামর্থ্য থাকলে হজ্জ পালন করা আখিরাতের জীবনের পাথেয়। সালাত যেমন ব্যক্তিকে শৃঙ্খলা শেখায়, তেমনি যাকাত সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর করে।
- সৎকর্ম ও উত্তম চরিত্র: আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা যেকোনো ভালো কাজই ‘হাসানা’র অন্তর্ভুক্ত। যেমন—অভাবীকে সাহায্য করা, সত্য কথা বলা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা এবং মানুষের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর।”
- আল্লাহর স্মরণ: সর্বদা আল্লাহর যিকির বা স্মরণে মগ্ন থাকা এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা অন্তরকে প্রশান্ত রাখে এবং পরকালে মুক্তির পথ সহজ করে।
বস্তুত, এই দোয়াটি একজন মুসলিমকে শেখায় কীভাবে দুনিয়া ও আখিরাতের মধ্যে একটি সুন্দর ভারসাম্য তৈরি করতে হয়। ইসলাম বৈরাগ্য বা দুনিয়া-বিমুখতাকে সমর্থন করে না, বরং সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠভাবে দুনিয়ার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণের শিক্ষা দেয়। তাই প্রতিটি কাজ ও চিন্তায় ‘হাসানা’ বা কল্যাণ অর্জনই হওয়া উচিত একজন বিশ্বাসীর জীবনের মূল লক্ষ্য।



