ইসলাম ধর্ম

ইসলামের গুরুতর কবিরা গুনাহ: নবীজি (সা.)-এর কঠোর সতর্কবার্তা

ধর্মীয় ডেস্ক: ইসলামে গুনাহ বা পাপকে সগিরা (ছোট) এবং কবিরা (বড়)—এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। কবিরা গুনাহ হলো সেই সব গুরুতর অপরাধ, যার জন্য আল্লাহ তাআলা শাস্তির বিধান রেখেছেন এবং যা থেকে বিরত থাকার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আবু বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) সবচেয়ে বড় কয়েকটি কবিরা গুনাহ সম্পর্কে তাঁর সাহাবিদের সতর্ক করেছেন।

হাদিসটি অনুযায়ী, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, “আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করব না?” সাহাবিরা উত্তরে বলেন, “অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসূল!” তখন তিনি তিনটি বিষয় উল্লেখ করেন:

১. আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা (শিরক)।
২. পিতামাতার অবাধ্য হওয়া।

এই দুটি বলার পর তিনি হেলান দেওয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসেন এবং অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বলতে থাকেন:

৩. সাবধান! মিথ্যা কথা বলা।
৪. সাবধান! মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।

নবীজি (সা.) শেষোক্ত দুটি বিষয় এমনভাবে বারবার বলতে থাকেন যে সাহাবিরা আকাঙ্ক্ষা করছিলেন, তিনি যদি এবার থামতেন। (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৫৯৭৬; সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৮৭)

মিথ্যা সাক্ষ্য শিরকের সমতুল্য

মিথ্যা কথা এবং মিথ্যা সাক্ষ্যকে ইসলামে অত্যন্ত ভয়াবহ পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, “মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া শিরকের সমপর্যায়ের।” এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইসলামি পণ্ডিতরা বলেন, ‘মিথ্যা’ একটি ব্যাপক শব্দ, যার সবচেয়ে নিকৃষ্ট রূপ হলো শিরক বা আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করা। আল্লাহর সত্তা, গুণাবলি বা অধিকারে অন্য কাউকে অংশীদার করা—এটাই সবচেয়ে বড় মিথ্যা।

মিথ্যা সাক্ষীর শাস্তি প্রসঙ্গে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফার পদক্ষেপ

মিথ্যা সাক্ষ্যের ভয়াবহতা কেবল পরকালীন শাস্তিতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ইসলামী খেলাফতের যুগে এর জন্য কঠোর দুনিয়াবি শাস্তিরও বিধান ছিল। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানকারী ব্যক্তির জন্য কয়েকটি শাস্তির বিধান রেখেছিলেন, যার মধ্যে ছিল:

  • পিঠে চাবুক মারা।
  • মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া।
  • মুখে কালিমা লেপন করা।
  • দীর্ঘ সময়ের জন্য কারাবন্দী করা।

একটি ঐতিহাসিক ঘটনায় বর্ণিত আছে, হজরত ওমর (রা.)-এর আদালতে একজনের সাক্ষ্য মিথ্যা প্রমাণিত হলে তিনি ওই ব্যক্তিকে একদিন জনসমাগমের স্থানে দাঁড় করিয়ে রাখেন এবং ঘোষণা দেন: “এই ব্যক্তি অমুকের ছেলে অমুক, সে একজন মিথ্যা সাক্ষী, তোমরা তাকে চিনে রাখো।” এরপর তিনি তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। (সুনানে বায়হাকী)

এই হাদিস এবং ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামে সত্যবাদিতা ও ন্যায়বিচারের গুরুত্ব কতটা অপরিসীম এবং মিথ্যাচার ও মিথ্যা সাক্ষ্য কতটা জঘন্য অপরাধ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button