অপরাধআইন ও বিচারদেশবাংলাদেশবিশ্লেষণরাজনীতি

ঐতিহাসিক সেই ৪ আগষ্ট, ২০২৪: ছাত্রলীগ অপরাধ বিচিত্রার সম্পাদক এস এম মোরশেদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: মনে পড়ে ১৯৫২ সাল? সেই দিনের ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষার জন্য দামাল ছেলেরা শহীদ হন। তৎকালীন পাকিস্তানী শাসক সর্বপ্রথম আমাদের ভাষার ওপর আক্রমন করে। কায়েদ-ই আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষনা করেন উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট ভাষা। বাংলা ভাষাকে কেড়ে নেওয়ার এই ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে অনেক রক্ত ঝরে। এ কারণে বলা হয়ে থাকে ভাষা আন্দোলনের মধ্যে আমাদের স্বাধীনতার বীজ নিহত আছে। ৫২ এর ২১ ফেব্রæয়ারীর পর ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছে ৭১। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী ও সংখ্যাগড়িষ্ঠতা অর্জন করার পরও পশ্চিমারা আমাদের হাতে ক্ষমতা দিতে রাজি হয় নাই। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইট চালায়। ঘুমন্ত ও নিরস্ত্র মানুষের ওপর নগ্নভাবে ঝাপিয়ে পড়ে। শুরু হয় গণহত্যা। এ এই গণহত্যার ঘটনা নিয়ে সারা বিশ^ তীব্র সমালোচনা করে। শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর এদেশ থেকে হানাদার বাহিনীর বিদায় হয়। ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। ১৭ ডিসেম্বর ছিল আমাদের স্বাধীন দেশের প্রথম সূর্যোদয়। আমরা একে একে অনেক শাসকের পরাধীন ছিলাম। ২০০ বছর শাসন করেছে বৃটিশ। ১৯৩৯ সালের ১ লা সেপ্টম্বর দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে আমরা বৃটিশের পক্ষে যুদ্ধে যেতে চাই নাই বলে অত্যাচারি বৃটিশ প্রচুর পরিমাণ খাদ্য অর্থাৎ চাল, ডাল ও বিভিন্ন ধরণের শস্য পানিতে ফেলে দেয়। ফলে দেশে দেখা দেয় ভয়াবহ দূভিক্ষ। যুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪৩ সালে খাদ্যের অভাবে প্রচুর লোকজন মারা গেছে। যারা বেঁচে গেছে তারা কঙ্কালসার হয়ে গেছে। বৃটিশের হাত থেকে ৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য শুরু হয় যা ভাষা আন্দোলনের পর ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে রুপ নেয়। তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বৃটিশ শাসনের আগে আমরা মুঘোল শাসকদের পরাধীনতা মেনে নিতে বাধ্য ছিলাম। নৌ যুদ্ধে দূর্বল থাকায় ও অত্যাধিক ভোগ বিলাশে নিমজ্জিত থাকার কারণে বৃটিশের হাতে মুঘোলদের পরাজায় হয়। এই পরাজয়ের পর এই দেশে ২০০ বছরের জন্য বৃটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। কয়েক শ বছরের পরাধীনতার পর আমারা ৭১ সনে নিজেদের জন্য একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করেত স্বক্ষম হয়েছি। প্রবাদে বলে স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা বেশি কঠিন। এই প্রবাদটির যথার্থতা আমারা হারে হারে উপলদ্ধি করতে পারছি দীর্র্ঘ ৫৫ বছর পর। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা দেখেছি দেশে কত সহিংসতা, কত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অভুথ্যান। ৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর ৭৪ সালে জুলফিকার আলী ভুট্রো আসেন পাকিস্তান থেকে। তার আগমনকে লাল গালিচা সম্বর্ধনা দেন এদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান যিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তান কারাগারে বন্ধি ছিলেন। তবে ৭৪ সালের ভুট্রোর এদেশে আসাটাকে অনেকে মেনে নিতে পারে নাই। হাজার হাজার লোক বিমান বন্দরে দাঁড়িয়ে “ভুট্রো গো ব্যাক” বলে শ্লোগান দিয়েছে। এগুলো সবই ইতিহাসের পাতায় আজীবন রয়ে যাবে। ১৯৭৫ সাল। ১৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মজিবর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয় এক সামরিক অভ’্যথ্যানের মাধ্যমে। আওয়ামী শাসনের অবসান ঘটে। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে একটি রাজনৈতিক দলের। ১৯৮০ সালে রাষ্টপতি জিয়াউর রহমানকে শেখ মুজিবর রহমানের মতই সেনা কর্মকর্তারা হত্যা করে। ক্ষমাত হাতে নেন জেনারেল এরশাদ। তিনি জাতীয় পার্টির সমর্থনে দীর্ঘ দিন সামরিক শাসন পরিচালনা করেন। ১৯৯০ এ গণ বিল্পবে তিনি গদি হারান। এর পর থেকে পালাবদল করে একবার বিএনপি, একবার আওয়ামীলীগ দেশের ক্ষমতায় আসে। তবে সর্বশেষ ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘ ১৫ বছর স্বৈরাচরি শাসন কায়েম করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে কোন সরকার এত দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় ছিল না। নির্বাচনের নামে একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে হাসিনা সরকার বারে বারে ক্ষতায় আসে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে নাই। বিরোধী দলীয় নেত্রি বিএনপির চেযারপার্সন খালেদা জিয়াকে তার বাসা হতে বের হতে দেয় নাই হাসিনার পুলিশ বাহিনী। তার বাসার সামনে বালুর ট্রাক দিয়ে রাস্তা আটকিয়ে রেখেছে আওামী পুলিশ। বিরোধী দলীয় হাজার হাজার নেতা কর্মির নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে ঠেলে দিয়েছে শেখ হাসিনা। উদ্দেশ্য রাতের বেলায় ব্যালট পেপারে সিল মেরে প্রহসনের নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকা। তাই শেখ হাসিনার নির্বাচনকে জনগণ বলতো রাতের ভোটের নির্বাচন। এই নির্বাচনে জনগণের মাতমত প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। এর পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার একই খেলা দেখা গেল। বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনের নির্ধারিত দিনের আগের দিন রাতের বেলা ব্যালট বাস্কে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ সরকার। ২০২৪ এর জানুয়ারীর নির্বাচনে জনগণ ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যায় নাই। কারণ কেউ ভোট কেন্দ্রে গেলে পুলিশ ও আওয়মীলীগের সন্ত্রসীরা হয়রানি ও মারধর করতো। শেখ হাসিনার দীঘ ১৫ বছর শাসনামলে আমরা কত রকমারির ঘটনা দেখলাম। নারায়গঞ্জের ৭ খুন, নারায়নগঞ্জের তৌকির হত্যা, সাগর-রুনি হত্যা, পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন সামরিক অফিসার হত্যা, আয়নাঘর কান্ড সহ আরও কতো কি। হাজার হাজার লোককে গুম ও খুন করেছে হাসিনা। এই গুম ও খুনের সাথে হাসিনার পুলিশ ও র‌্যাব জড়িত। প্রতিবেশি ভারতের সাথে যেসব চুক্তি হাসিনা করেছে তা সবই জনগণের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের ট্রেন যাবে এক শত কিলোমিটার পর্যন্ত এমন চুক্তিও তিনি ভারতে গিয়ে স্বাক্ষর করে এসছেন। তার স্বৈরাচার শাসনামলে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করা হয়েছে। এই লুটের সাথে শেখ হাসিনা পরিবার সহ দলীয় নেতা কর্মীরা জড়িত। এক এস আলম গ্রæপ ইসলামী ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়। বেসিক ব্যাংকের সারে চার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয় হাসিনার আমলে। হলমার্কের সারে চার হাজার কোাট টাকা লুট করে আওয়ামীলীগের সমর্থন পাওয়া ব্যবাসয়ীরা। বিসমিল্লাহ গ্রপের নামে আরেক লুটেরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে লুট করে ১২ শত কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ৮ শত কোটি টাকা চুরির পর হাসিনা অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। এসব টাকা লুট করে বিদেশে আলীশান বাড়ি তৈরি করে তারা আয়েশী জীবন পার করছে। এদিকে দেশের অর্থনীতির বারোটা বেজে গেছে। এই ¯ৈরাচার হাসিনার পতনের জন্য বছরের পর আন্দোলন করে ব্যর্থ হয় বিরোধী দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি। অবশেষে ২০২৪ ইং সালে জুলাই থেকে ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের সাথে হাসিনা পতনের আন্দোলন শুরু হয়। হাসিনার পুলিশ বাহনী আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর লাঠি চার্জ ও গুলি ছোঁড়ে। আগষ্টে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। আবু সাইদ, মুগ্ধ ও অনেকে পুলিশের গুলি খেয়ে মাটিতে লুটয়ে পড়ে। হাজারের ওপর শহীদ হন। শেষে আপামর জনগণ এই আন্দোলনে যোগদান করে। অপরাধ বিচিত্রাও বসে থাকে নাই। অপরাধ বিচিত্রার সম্পাদক জনাব এস এম মেরাশেদের নেতৃত্বে পত্রিকাটির সাংবাদিক, পাঠক পৃষ্ঠপোষক সকলে রাস্তায় নেমে যান। জাতীয় প্রেক্লাবের সামে রাস্তায় তারা ব্যানার নিয়ে বসে যান ও হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র শ্লোগান দিতে থাকেন। এক পর্যায় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করতে থাকে। গ্যাসের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে অপরাধ বিচিত্রার সকলে উঠে গিয়ে একটু দূরে অবস্থান নেন। অনেকে রাস্তায় পড়ে থাকা কাগজ টুকিয়ে আগুন ধরিয়ে নাকের সামনে এনে গ্যাসের তীব্রতা হ্রাস করার চেষ্টা করছেন। কিন্ত হায় সেখানেও রক্ষা হয় নাই। ছাত্রলীগ দল বেঁধে লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অপরাধ বিচিত্রার সকলের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা আপরাধ বিচিত্রার সম্পাদক সহ সকলকে প্রথমে কী কারণে এখানে আসেছেন তা জিজ্ঞাসা করতে থাকে। কোন কিছু বলার আগেই ছাত্রলীগ অপরাধ বিচিত্রার সম্পাদক এস এম মোরশেদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। তাকে শারীরিক আক্রমন করে ও তার সাথে থাকা স্যামসাং মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা, মানিব্যাগ তারা নিজেরাই হাতিয়ে ছিনিয়ে নেয়। অপরাধ বিচিত্রার অন্যান্য সাংবাদিকসহ উপস্থিত সকলের ওপর তারা হামলা চালায়। এই সময় অনেকে দৌড়ে জীবন রক্ষা করে। হামলাকারিরা এক পর্যায় নিকটস্ত অন্যান্য আন্দোলনকারিদের ধাওয়া করতে গেলে সুযোগ বুঝে অপরাধ বিচিত্রার সকলে এক দৌড়ে ঘটনাস্থল থেকে সরে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। অবশেষে ২০২৪ এর ৪ তারিখ। চারিদিকে আন্দোলনের তীব্রতা। বিকেল ৫.০০ ঘটিকার সময় গণমাধ্যমে ঘোষনা দেয়া হলো ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা। এই ঘোষনায় চারিদেকে আনন্দের জোয়ার বয়ে গেল। রাস্তায় লোকজন নেমে উল্লাসে মেতে ওঠে। সবাই বলছে দেশ পুণরায় স্বাধীন হলো। তবে এই স্বধীনতার সুফল জনগণ কবে ও কতটুকু পাবে তা সময়েই বুঝা যাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button