ওএমএস ডিলার নিয়োগে ‘পাতানো লটারি’র অভিযোগ, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানী ঢাকায় খাদ্য অধিদপ্তরের ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) ডিলার নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও ‘লোক দেখানো প্রহসনে’র অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা রেশনিং দপ্তরের অধীনে গত ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একটি লটারিকে ‘পাতানো নাটক’ বলে অভিহিত করে এর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বঞ্চিত ডিলাররা।
তাদের অভিযোগ, কোনো প্রকার লিখিত নোটিশ বা প্রকাশ্য বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই গোপনে, কেবলমাত্র নির্বাচিত কিছু ব্যক্তিকে মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে লটারির আয়োজন করা হয়। এটিকে পূর্বপরিকল্পিত এবং প্রভাবশালী মহলের পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন ভুক্তভোগীরা।
অনিয়মের কেন্দ্রবিন্দু ‘গোপন লটারি’
সূত্র মতে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) ভবনে এই লটারির আয়োজন করা হয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী কোনো জাতীয় দৈনিক বা দাপ্তরিক নোটিশ বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে, কেবল কিছু নির্দিষ্ট ডিলারকে এসএমএস পাঠিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই এসএমএসকেই অনুষ্ঠানে প্রবেশের পাস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে বহু যোগ্য আবেদনকারী লটারির বিষয়ে কোনো তথ্যই পাননি এবং অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন।
বঞ্চিতদের অভিযোগ, যেসব ডিলারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, কেবল তারাই আমন্ত্রণ পেয়ে লটারিতে অংশ নেন এবং প্রত্যাশিতভাবেই বিজয়ী হন। এটি ওএমএস নীতিমালা ২০২৪-এর সরাসরি লঙ্ঘন, যেখানে বলা হয়েছে—দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত পূর্বের ডিলারদের বাদ দেওয়া যাবে না।
বঞ্চিত ডিলারদের দাবি ও প্রস্তাবনা
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ ডিলাররা অবিলম্বে গত ২৯ সেপ্টেম্বরের লটারি বাতিল করে একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ায় পুনরায় ডিলার নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। তাদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- এলাকাভিত্তিক সকল আবেদনকারীর তালিকা প্রকাশ করে স্বচ্ছভাবে লটারি সম্পন্ন করা।
- ঘুষ-বাণিজ্য ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ন্যায়ভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা।
- দায়িত্বে থাকা রেশনিং কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব তদন্ত করা।
একইসঙ্গে, ওএমএস কার্যক্রমকে দুর্নীতিমুক্ত করতে তারা কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাও দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে—বাইরোটেশনের মাধ্যমে রোস্টার সিস্টেম বাস্তবায়ন, প্রতিটি বিক্রয়কেন্দ্রে ভিডিও কলের মাধ্যমে তদারকি এবং কালোবাজারি প্রতিরোধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ।
প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা ও আন্দোলনের প্রস্তুতি
ভুক্তভোগী ডিলাররা জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি তাদের দাবি মেনে নিয়ে এই ‘পাতানো লটারি’ বাতিল করা না হয়, তবে তারা সংগঠিত হয়ে রাজধানীতে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।



