জান্নাতের পথে নারী: ইসলামে করণীয় ও বর্জনীয়
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: মুমিন জীবনের চূড়ান্ত সফলতা হলো জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পেয়ে চিরস্থায়ী শান্তির নীড় জান্নাতে প্রবেশ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, “যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই সফল।” (সূরা আলে ইমরান: ১৮৫)। এই সফলতা অর্জনের জন্য নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকেই প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে।
তবে হাদিসের আলোকে দেখা যায়, নারীদের জন্য জান্নাত লাভের পথ যেমন সহজ করা হয়েছে, তেমনি কিছু নির্দিষ্ট দুর্বলতার কারণে তাদের জাহান্নামে যাওয়ার ঝুঁকিও বেশি। মিরাজের রাতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দেখেছিলেন যে, জাহান্নামবাসীদের অধিকাংশই নারী। তাই নারীদের জন্য ইসলাম প্রদর্শিত সহজ পথগুলো অনুসরণ করা এবং যেসব বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে, তা থেকে বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরি।
জাহান্নামের অধিকাংশ নারী হওয়ার কারণ
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নারীদের জাহান্নামে বেশি যাওয়ার কারণ হিসেবে একটি বিশেষ দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন:
“আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়েছে। আমি দেখেছি, তার অধিকাংশ অধিবাসী নারী। কারণ তারা অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।” জিজ্ঞেস করা হলো, “তারা কি আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ?” তিনি বললেন, “না, তারা স্বামীর অবদান ও অনুগ্রহের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তুমি যদি সারা জীবন তাদের একজনের প্রতি দয়া ও সদ্ব্যবহার করো, এরপর সে তোমার সামান্য একটি ত্রুটি দেখলেই বলে বসবে, ‘তোমার কাছে আমি কখনোই ভালো কিছু পাইনি’।” (সহীহ বুখারী)
এই হাদিসটি মূলত পারিবারিক জীবনে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও কৃতজ্ঞতার গুরুত্ব তুলে ধরে।
জান্নাত লাভের চারটি সহজ আমল
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নারীদের জন্য জান্নাত লাভের চারটি সহজ কিন্তু শক্তিশালী আমলের কথা বর্ণনা করেছেন, যা তাদের জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দিতে পারে। তিনি বলেন:
“যখন কোনো নারী পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে, রমজান মাসের রোজা রাখবে, নিজের সতীত্বের হেফাজত করবে এবং তার স্বামীর আনুগত্য করবে, তাকে বলা হবে, ‘জান্নাতের যে দরজা দিয়ে চাও, তুমি প্রবেশ করো’।” (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে হিব্বান; শাইখ আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)
স্বামীর সন্তুষ্টির গুরুত্ব
ইসলামে স্ত্রীর জন্য স্বামীর আনুগত্য ও তার প্রতি সদ্ব্যবহারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন:
“যখনই কোনো নারী এই দুনিয়ায় তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখন জান্নাতের হুরদের মধ্য থেকে তার জন্য নির্ধারিত স্ত্রী বলে, ‘তাকে কষ্ট দিও না, আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন! সে তো তোমার কাছে একজন আগন্তুক মাত্র। অচিরেই সে তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবে’।” (তিরমিযী, সহিহ)
জান্নাত লাভে সহায়ক ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
উপরে উল্লেখিত মূল ভিত্তিগুলো ছাড়াও, ইসলাম নারীদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা উপস্থাপন করে, যা অনুসরণ করলে জান্নাতের পথ আরও সুগম হবে। এমন ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ আমল নিচে তুলে ধরা হলো:
১. বিনয় ও একাগ্রতার সাথে সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ সালাত আদায় করা।
২. ফরজ সালাতের পাশাপাশি তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশতসহ বিভিন্ন নফল সালাতে অভ্যস্ত হওয়া।
৩. রমজান মাসের ফরজ রোজা যথাযথভাবে পালন করা।
৪. সোমবার, বৃহস্পতিবার, আইয়ামে বীয (আরবি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ) এবং অন্যান্য সুন্নত নফল রোজা রাখার চেষ্টা করা।
৫. যাকাত ফরজ হলে তা আদায় করা এবং সাধ্যমতো বেশি পরিমাণে নফল দান-সদকা করা। (হাদিসে নারীদের দান-সদকার মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে)।
৬. হজ্জ ফরজ হলে তা আদায় করা এবং সামর্থ্য থাকলে উমরা পালন করা।
৭. নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করা এবং এর অর্থ ও তাফসির পাঠের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন করা।
৮. দোয়া, জিকির, তাসবিহ ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করা।
৯. গিবত, চোগলখুরী, মিথ্যাচার, অশ্লীল কথা, গালিগালাজ ও অভিশাপ দেওয়া থেকে জিহ্বাকে কঠোরভাবে সংযত রাখা।
১০. তাবিজ-কবজ, রিং-সূতা এবং গণকের সাহায্য নেওয়ার মতো সকল প্রকার শিরকি কর্মকাণ্ড থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা।
১১. স্বামীর প্রতি অনুগত থাকা এবং তার সৎকাজে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
১২. স্বামীর অনুপস্থিতিতে নিজের সম্মান ও সতীত্ব কঠোরভাবে হেফাজত করা।
১৩. আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, বিশেষ করে রক্ত-সম্পর্কীয় আত্মীয়দের অধিকার রক্ষা করা।
১৪. অসহায় ও দরিদ্রদের খাদ্য দান, এতিমদের প্রতিপালন এবং दीन শিক্ষার প্রসারে সাধ্যমতো সহযোগিতা করা।
১৫. মসজিদ-মাদরাসা বা যেকোনো জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করা।
এই আমলগুলোর অধিকাংশই নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে জাহান্নাম থেকে বাঁচার এবং জান্নাতে প্রবেশের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।



