জিহ্বার সংযম: জান্নাত লাভের অন্যতম শর্ত
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলামে মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গের সঠিক ব্যবহার এবং তা দ্বারা সংঘটিত পাপ থেকে বেঁচে থাকার ওপর অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে জিহ্বা বা বাকশক্তি এমন একটি অঙ্গ, যা আকারে ছোট হলেও এর মাধ্যমে সংঘটিত পাপের তালিকা অত্যন্ত দীর্ঘ এবং ভয়াবহ। জিহ্বার সামান্য অসতর্কতা মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিহ্বার সংযমকে জান্নাত লাভের অন্যতম পূর্বশর্ত হিসেবে ঘোষণা করেছেন। সাহাবি সাহাল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আমাকে তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী অঙ্গ (জিহ্বা) এবং দুই উরুর মধ্যবর্তী অঙ্গের (লজ্জাস্থান) হেফাজতের নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব।” (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৬৪৭৪)
এই হাদিসটি জিহ্বা এবং লজ্জাস্থানের হেফাজতের অপরিসীম গুরুত্বকে তুলে ধরে। জিহ্বার মাধ্যমে মানুষ যেমন অগণিত সওয়াব অর্জন করতে পারে, তেমনি এর অপব্যবহারে জড়িয়ে পড়তে পারে অসংখ্য কবিরা গুনাহে।
জিহ্বা দ্বারা সংঘটিত ১৯টি গুরুতর পাপ
ইসলামী স্কলাররা কুরআন ও হাদিসের আলোকে জিহ্বা দ্বারা সংঘটিত হতে পারে এমন অসংখ্য পাপের মধ্য থেকে কিছু গুরুতর পাপকে চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৯টি পাপ হলো:
১. নাম বিকৃত করা: কাউকে ব্যঙ্গ করে বা খারাপ নামে ডাকা।
২. বিদ্রূপ ও ঠাট্টা: অন্যকে হেয় করার উদ্দেশ্যে ঠাট্টা বা বিদ্রূপ করা।
৩. অশ্লীল বাক্য: অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ ও নোংরা কথা বলা।
৪. গালিগালাজ: কাউকে গালি দেওয়া বা অভদ্র ভাষা ব্যবহার করা।
৫. নিন্দা: কারও অনুপস্থিতিতে তার সমালোচনা করা।
৬. অপবাদ (বুহতান): কারও ওপর মিথ্যা দোষারোপ করা।
৭. চোগলখুরী (নামিমাহ): দুজনের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করার উদ্দেশ্যে একজনের কথা অন্যজনের কাছে লাগানো।
৮. গোপনীয়তা প্রকাশ: বিনা প্রয়োজনে অন্যের গোপন কথা ফাঁস করে দেওয়া।
৯. মুনাফিকি ও দ্বিমুখী নীতি: একজনের কাছে এক কথা এবং অন্যজনের কাছে আরেক কথা বলে স্বার্থ হাসিল করা।
১০. অতিরিক্ত ও অনর্থক কথা: অপ্রয়োজনীয় ও অর্থহীন কথাবার্তায় সময় নষ্ট করা।
১১. বাতিল আলোচনা: হারাম বা অনৈসলামিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করে আনন্দ লাভ করা।
১২. গীবত: কারও অনুপস্থিতিতে এমন কথা বলা যা শুনলে সে কষ্ট পেত।
১৩. খারাপ উপাধি দেওয়া: কাউকে অপমানজনক উপনামে ডাকা।
১৪. অভিশাপ (লানত): কাউকে অভিশাপ দেওয়া বা বদদোয়া করা।
১৫. অতিরিক্ত প্রশংসা: কারও সামনাসামনি এমন প্রশংসা করা যা তাকে অহংকারী করে তুলতে পারে।
১৬. মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা: বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা স্বপ্ন বলা।
১৭. অহেতুক চিৎকার: কোনো কারণ ছাড়াই চিৎকার বা চেঁচামেচি করে পরিবেশ নষ্ট করা।
১৮. হারাম আস্বাদন: জিহ্বা দিয়ে মদ, শুকরের মাংস বা অন্য কোনো হারাম বস্তুর স্বাদ গ্রহণ করা।
১৯. অবজ্ঞাসূচক ভঙ্গি: জিহ্বা বের করে কাউকে ব্যঙ্গ বা অবজ্ঞা করা।
এই পাপগুলো থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুমিনের জন্য অপরিহার্য। জিহ্বার সঠিক ব্যবহার যেমন মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করে, তেমনি এর অপব্যবহার তাকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে কথা বলার আগে চিন্তা করার এবং জিহ্বাকে সকল প্রকার পাপ থেকে হেফাজত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।



