Uncategorizedইসলাম ধর্ম

ধৈর্যশীলদের জন্য আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও পুরস্কার

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলামে ধৈর্য বা ‘সবর’ মুমিনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ হিসেবে বিবেচিত। এটি কেবল বিপদে অবিচল থাকা নয়, বরং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে তাঁর সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট থাকার এক গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলন। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে বারবার ধৈর্য ধারণের গুরুত্ব এবং এর বিনিময়ে অকল্পনীয় পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে।

পবিত্র কুরআনে ধৈর্যের গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করেন এবং ধৈর্যশীলদের জন্য রেখেছেন মহাপুরস্কার। তিনি বলেন:

“হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং ধৈর্য ধারণে প্রতিযোগিতা কর।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ২০০)

জীবনের নানা পর্যায়ে ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষতির মতো পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু এসব পরিস্থিতিতে যারা ধৈর্যের পরিচয় দেন, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। যেমনটি তিনি বলেছেন:

“নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধনপ্রাণ এবং ফলের (ফসলের) نقصان দ্বারা পরীক্ষা করব; আর তুমি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও।” (সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৫৫)

ধৈর্যশীলদের পুরস্কার এতটাই বিশাল যে, আল্লাহ তা‘আলা এর কোনো সীমা নির্ধারণ করেননি। তিনি বলেন:

“ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।” (সূরা যুমার, আয়াত: ১০)

ইসলামে ধৈর্য ও ক্ষমা মহৎ গুণ হিসেবে স্বীকৃত এবং একে দৃঢ় সংকল্পের কাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।” (সূরা শুরা, আয়াত: ৪৩)

বিপদ ও কঠিন মুহূর্তে ধৈর্য এবং নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ আল্লাহ সর্বদা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।

“হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।” (সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৫৩)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাদিসে ধৈর্যের মহিমা

নবী করিম (সাঃ) তাঁর অসংখ্য হাদিসে ধৈর্যের বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন:

  • “যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা প্রদান করবেন। আর কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো দান দেওয়া হয়নি, যা ধৈর্য অপেক্ষা উত্তম ও বিস্তর হতে পারে।” (সহীহ বুখারী, হাদিস: ১৪৬৯)
  • তিনি আরও বলেন, “আঘাতের শুরুতে সবর করাটাই হলো প্রকৃত সবর।” (সহীহ বুখারী, হাদিস: ১২৮৩)

বিপদে ধৈর্য ধারণের প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

  • “আমার মু’মিন বান্দার জন্য আমার নিকট জান্নাত ব্যতীত অন্য কোনো পুরস্কার নেই, যখন আমি তার দুনিয়ার প্রিয়তম কাউকে কেড়ে নিই এবং সে সওয়াবের নিয়তে সবর করে।” (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৬৪২৪)
  • “যখন আমি আমার বান্দাকে তার প্রিয়তম দুটি জিনিস দ্বারা (অর্থাৎ চক্ষু থেকে বঞ্চিত করে) পরীক্ষা করি এবং সে সবর করে, আমি তাকে এ দু’টির বিনিময়ে জান্নাত প্রদান করব।” (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৫৬৫৩)

বিপদ-আপদকে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা এবং তাঁর ভালোবাসার চিহ্ন হিসেবেও দেখতে উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন:

  • “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।” (সহীহ বুখারী, হাদিস: ৫৬৪৫)

অতএব, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা (তাওয়াক্কুল) রাখা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য। কারণ ধৈর্যের পথ ধরেই আসে আল্লাহর সাহায্য ও অফুরন্ত প্রতিদান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button