কুরআনের মর্যাদা রক্ষা: অবমাননার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে ইসলামের সতর্কতা
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: পবিত্র কুরআন মুসলিম উম্মাহর জন্য কেবল একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, বরং এটি মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত জীবন্ত হেদায়েত এবং ঈমানের মূল ভিত্তি। এই পবিত্র কালামের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেক মুমিনের অপরিহার্য কর্তব্য। কিন্তু যদি কেউ এই মহাগ্রন্থের অবমাননা করে, তবে তার পরিণতি কী? ইসলাম এ বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
কুরআনের দৃষ্টিতে এটি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ
কুরআন অবমাননা বা একে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করাকে ইসলাম শুধু পাপ হিসেবেই দেখে না, বরং এটিকে ঈমান ভঙ্গের কারণ হিসেবে গণ্য করে। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন:
“তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, তারা বলবে—‘আমরা তো কেবল আলাপ-আলোচনা ও মজা করছিলাম।’ বল, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসূলের সঙ্গে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছিলে?’ তোমরা অজুহাত দিও না, তোমরা ঈমানের পর কুফরিতে লিপ্ত হয়েছো।” (সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৬৫-৬৬)
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, যারা আল্লাহ, তাঁর আয়াত (কুরআন) বা রাসূলকে নিয়ে উপহাস করে, তারা ঈমান থেকে বিচ্যুত হয়ে কুফরিতে লিপ্ত হয়।
শুধু তাই নয়, এই ধরনের কর্মকাণ্ডের জন্য আল্লাহ কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন:
“যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাকর শাস্তি।” (সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৭)
কুরআন যেহেতু আল্লাহর বাণী, এর অবমাননা সরাসরি আল্লাহকেই কষ্ট দেওয়ার শামিল। তাই এর শাস্তিও অত্যন্ত ভয়াবহ।
রাসূলের (ﷺ) সতর্কতা ও ইসলামি আইন
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর উম্মতকে কুরআনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তাফসীর ইবনে কাসীরে সূরা তাওবার ৬৫-৬৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় এমন বর্ণনা এসেছে যে, “যে ব্যক্তি কুরআনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে, সে যেন নিজের ধ্বংস ডেকে আনে।”
ইসলামি আইনশাস্ত্র বা ফিকহের দৃষ্টিতেও এটি একটি গুরুতর অপরাধ। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.)-এর মতে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কুরআনের অবমাননা করে, তবে তা ‘রিদ্দা’ বা ইসলাম ত্যাগ হিসেবে গণ্য হবে। (আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা, ২/৫৬)
এমন ব্যক্তির পার্থিব শাস্তি ইসলামি আদালতের বিচারকের হাতে ন্যস্ত। তবে যদি সে তওবা না করে মৃত্যুবরণ করে, তবে পরকালে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠিন আযাব।
ভ্রান্তি থেকে ফেরা: তওবার সুযোগ
প্রশ্ন হলো, কেউ যদি ভুলবশত বা অজ্ঞতার কারণে এমন গর্হিত কাজ করে ফেলে, তার জন্য কি ক্ষমার কোনো সুযোগ আছে?
ইসলাম হতাশাকে প্রশ্রয় দেয় না। আল্লাহ তা’আলার রহমতের দরজা সর্বদা উন্মুক্ত। যদি কোনো ব্যক্তি তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আন্তরিকভাবে তওবা করে, আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং ভবিষ্যতে এমন কাজ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে, তবে পরম করুণাময় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করতে পারেন।
আল্লাহ বলেন:
“বল, হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের প্রতি সীমালঙ্ঘন করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।” (সূরা আজ-যুমার, আয়াত: ৫৩)
সুতরাং, কুরআনের মর্যাদা রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা এবং কোনো ভুল হয়ে গেলে অবিলম্বে তওবার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে আসাই একজন মুমিনের দায়িত্ব।



