খলিফা উমরের (রা.) ইনসাফ: অমুসলিমদের অধিকার ও বর্তমান রাজনৈতিক বিতর্ক
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রা.)-এর শাসনকালের একটি বিখ্যাত ঘটনা। তিনি তখন মুসলিম বিশ্বের খলিফা। একদা তিনি এক বৃদ্ধ ইহুদিকে মসজিদের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতে দেখেন। এই দৃশ্য দেখে খলিফা ব্যথিত হন এবং তাকে ডেকে বলেন:
“আমরা তোমার প্রতি সুবিচার করিনি। কারণ, তোমার যৌবনকালে আমরা তোমার কাছ থেকে জিযিয়া (নিরাপত্তা কর) গ্রহণ করেছি, আর আজ তোমার বার্ধক্যে তোমাকে এভাবে অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখেছি।”
এই বলে তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার ‘বায়তুল মাল’ থেকে সেই বৃদ্ধের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করে দেন। (সূত্র: কিতাবুল আমওয়াল, ইবনে যানজূয়াহ্, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ১৪৩, হাদিস: ১৭৯)
হযরত উমর (রা.)-এর এই ঐতিহাসিক ইনসাফের ঘটনাকে সামনে রেখে একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। যেখানে খলিফা উমর (রা.) একজন অমুসলিম নাগরিকের প্রতি এমন উদারতা ও দায়িত্ববোধ দেখিয়েছেন, সেখানে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা ভোটের জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে যাওয়ায় একদল আলেম যেভাবে তুলকালাম কাণ্ড করছেন, তা কি উমর (রা.)-এর আদর্শের সাথে সংগতিপূর্ণ? তারা কি নিজেদের খলিফার চেয়েও বড় ধার্মিক মনে করছেন? সমর্থকদের যুক্তি হলো, জামায়াতের প্রার্থীরা কেবল ভোট চাইতে গিয়েছেন, কোনো পূজা বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যাননি বা অন্য সময়েও পূজা মণ্ডপে গিয়ে বসে থাকেন না।
প্রকৃতপক্ষে, এই সমালোচনাকারী আলেমদের একাংশের বিরুদ্ধে সমাজে একটি সাধারণ অভিযোগ হলো, তারা ইসলামের প্রকৃত কল্যাণ সাধনের চেয়ে ধর্মকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করেন। যেমন:
- দেশের যেকোনো দুর্যোগ বা মহামারির সময়ে সাধারণ মানুষের পাশে তাদের দাঁড়াতে দেখা যায় না।
- যখন কোনো আলেম বা ইমাম জালিমদের দ্বারা নির্যাতিত হন বা মসজিদের মিম্বর থেকে অন্যায়ভাবে অপসারিত হন, তখন তারা নীরব থাকেন।
- যখন একজন ইমাম মাত্র ২০০০/- টাকার মতো স্বল্প বেতনে মানবেতর জীবনযাপন করেন, তখনও এই ‘ধর্মব্যবসায়ী’ আলেমরা তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন না।
সমর্থকদের ধারণা, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে এই শ্রেণীর ‘ধর্মব্যবসায়ীদের’ প্রভাব কমে যাবে—এই আশঙ্কা থেকেই তারা এমন ভিত্তিহীন সমালোচনা করছেন।



