অপরাধআইন ও বিচারদুর্নীতিদেশবাংলাদেশসম্পাদকীয়

দুর্নীতির বরপুত্র মঞ্জুর আলী প্রকল্প শুরু হতেই শত কোটি টাকা পিডি মঞ্জুর আলীর পকেট

বিশেষ প্রতিনিধি: এলজিইডির বৃহৎ প্রকল্প আর ইউ টি ডি পি শুরু হতে না হতেই শত কোটি টাকা পকেটে ভরেছেন পিডি মোঃ মঞ্জুর আলী। এম জিএসপি,র উদ্বিত্ব টাকা, আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগ, কনসালটেন্ট ফার্ম নিয়োগ, ইন্ডিভিজুয়াল কনসালটেন্ট নিয়োগ,অফিস ডেকোরেশন, কেনাকাটা, নতুন পিডি নিয়োগসহ অন্যান্য খাতথেকে ঘুষের বিনিময়ে কামিয়েছেন এই টাকা। অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর অতিরিক্ত দায়িত্ব, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোঃ মঞ্জুর আলী পি ই ডি পি,র সহকারী প্রকৌশলী, এম জি এসে পি,র ডিপিডি ও পাঁচ আগস্ট ২০২৪ এর পর সেই সময়ের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আলী আক্তার হোসেন বিরোধী প্রপাকান্ডা , সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ মুজাক্কা জাহেরকে লাঞ্চিত করার মাস্টার মাইন্ড ,বদলি ও নিয়োগ বানিজ্য |ইউ টি ডি পি শুরু হতেই শত কোটি টাকা পকেটে ভরেছেন পিডি মোঃ মঞ্জুর আলী এর উপর তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন। ধানমন্ডি – মোহাম্মদ একাধিক ফ্ল্যাট, মধুমতি মডেল টাউনে কয়েকটি প্লট, বনগাঁ, বিরুলিয়ায় কয়েক একর জমি মঞ্জুর আলীর|
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ‘এলজিইডি’র অন্যতম ব‌হৎ একটি প্রকল্প রেজিলিয়েন্ট আরবান এন্ড টেরিটোরিয়াল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট সংক্ষেপে আর ইউ টি ডি পি।নাম মাত্র ইন্টারেস্টে সিংহ ভাগ বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পের আওতায় ৮১ টি পৌরসভা ও ছয়টি সিটি কর্পোরেশন এবং মোট বরাদ্দ প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা।এই প্রকল্পের আলোচিত সমালোচিত প্রকল্প পরিচালক মোঃ মঞ্জুর আলী, তিনি একই সাথে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্বে আছেন। এখানে উল্লেখ্য অন্যান্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী যারা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর রুটিন দায়িত্ব বা অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন তাদের নামের সীলে নামের পিছনে অতিরিক্ত দায়িত্ব লেখা আছে অথচ মঞ্জুর আলী তার তার নেমপ্লেট ও নামের সীলে সরাসরি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী লিখেছেন। এমনকি প্রধান প্রকৌশলীও তার নেমপ্লেটে ও নামের সীলে অতিরিক্ত দায়িত্ব লিখেছেন।
সূত্র জানায় মঞ্জুর আলী এমজিএসপি প্রকল্পের ডিপিডি ছিলেন, প্রকল্প শেষে ২০ কোটি টাকা উদ্বিত্ব ছিল এবং সেই টাকা নতুন প্রকল্প তৈরির কাজে খরচ করার কথা থাকলেও বিভিন্ন ধরনের ভুয়া খরচ দেখিয়ে সমুদয় টাকা নিজে মেরে দিয়েছেন।
আর ইউ টি ডি পি’র নিয়োগ বানিজ্য: এই প্রকল্পের নিয়োগ তিন ধরনের প্রথমত: আউটসোর্সিং নিয়োগ এরপর ইন্ডিভিজুয়াল কনসালটেন্ট ও কনসালটেন্ট ফার্মের মাধ্যমে নিয়োগ। এই তিন ধরনের বিভিন্ন পদে প্রায় পাঁচশ নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। সূত্র জানায় আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন পদে ৩৫০ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং পদ বিশেষ সর্ব নিম্ন তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকা হারে ঘুষ নিয়েছেন পিডি নিজেই। এই জনবলের বড় অংশ দিনাজপুর ও আশপাশের এলাকার। সূত্র জানায় দিনাজপুর নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে উচ্চমান সহকারী মনোয়ার হোসেন দুইশ লোক সরবরাহ করেছেন। পিডি অফিসে কর্মরত কম্পিউটার অপারেটর মনির সরবরাহ করেছেন প্রায় ৫০ জন। সূত্র জানায় মনির হোসেন পিডির নিকট আত্মীয়। তিনিও নিয়োগ বানিজ্যে সহায়তা করে কামিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। জানা যায় মনোয়ার হোসেন পিডি মঞ্জুর আলীর ছোট ভাই। জনবলের বড় অংশ সরবরাহ করেছেন পিডির আরেক ভাই রাজু। RUTDP এর ডিপিডি -১ মফিজুর রহমান ও এই নিয়োগ বানিজ্যের সাথে জড়িত ।পাঁচ আগস্ট ২০২৪ এর
পর সহকারী প্রকৌশলী রাজু বদলি হয়ে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে আসেন। বদলি ও নিয়োগ বানিজ্যে সিদ্ধহস্ত এই রাজু আর ইউ টি ডি পি’র আউটসোর্সিং ও কনসালটেন্ট পার্টের জন বলের বড় একটি অংশ সরবরাহ করেছেন। পিডি মঞ্জুর আলীর নির্ধারিত রেটের বাইরে পদ বিশেষ এক থেকে দেড় লাখ টাকা অতিরিক্ত নিয়েছেন। পিডির এক ভাগ্নে মুশফিক সরবরাহ করেছে অনেক জনবল। মনোয়ার,রাজু,মনির, মুশফিক সকলেই পিডির নির্ধারিত রেটের বাইরে অতিরিক্ত হারে প্রত্যেকে কামিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
কনসালটেন্ট ফার্ম নিয়োগে ঘুষ বানিজ্য: আর ইউ টি ডি পি প্রকল্পের কনসালটেন্ট ফার্ম নিয়োগে মোটা অংকের ঘুষ নিয়েছেন পিডি মঞ্জুর আলী। ডিপিপি সূত্রে জানা যায় কনসালটেন্ট পার্টে ধরা আছে ৩শ ৭০ কোটি টাকা। সূত্র জানায় এই খাতের টাকা অনেক নয়- ছয় করার সুযোগ আছে। ধূর্ত মঞ্জুর আলী এই ধরনের ফাঁক ফোকর রেখেই প্রকল্প তৈরি করেছেন। সূত্র জানায় ২০% টাকা ঘুষ নিয়ে চারটি কনসালটেন্ট ফার্ম নিয়োগ দিয়েছেন পিডি মঞ্জুর আলী। জানা গেছে ইফতিশা,এ্যকুয়া কনসালটেন্সি,ডেপকো ও ডিপিএম এই চারটি ফার্ম নিয়োগ পেয়েছে ওই প্রকল্পে। সূত্র আরো জানায় কনসালটেন্ট ফার্ম টেন্ডার সাবমিটের সময় যে সিভি সামিট করেছিল তার একটিও পিডি মঞ্জুর আলী নেননি। এ্যাসিস্ট্যান্ট মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ার(AME) ৮৭ জন সহ অন্যান্য সকল পদের জনবল পিডি মঞ্জুর আলী নিজেই দিয়েছেন এবং প্রত্যেকের নিকট থেকে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা হারে ঘুষ নিয়েছেন। এখানে শেষ নয় ইন্ডিভিজুয়াল কনসালটেন্ট নিয়োগে ঘুষের রেট অনেক বেশি। এই পার্টের কনসালটেন্টের বেতন তিন লাখ থেকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত। এইসব পদের জন্য পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকা হারে ঘুষ নিয়েছেন পিডি মঞ্জুর আলী। সূত্র জানায় কনসালটেন্ট পার্টে এমন কিছু পদ রাখা হয়েছে সে পদে কোন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়নি তাদের বেতনের টাকা ৭৫ ভাগ পিডি আর ২৫ ভাগ ফার্মের মধ্যে ভাগাভাগি হবে। সূত্র জানায় পিডি মঞ্জুর আলীর বাড়ির কাজের মেয়ে,বাসার দারোয়ান, বাবার দেখা শুনার লোক, ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে যে ফ্ল্যাট,প্লট ও জায়গা আছে সেগুলো দেখভাল করার কর্মচারি সকলের বেতন হয় এই প্রকল্প থেকে। এই প্রকল্পের বিভিন্ন পদে তাদের নিয়োগ দেখানো হয়েছে। একটি সূত্র জানায় বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি কোভেনার সাথে মঞ্জুর আলীর দহরম মহরম সম্পর্ক। দীর্ঘদিন বিভিন্ন উপঢৌকন , নানান রকম উন্নত মানের খাদ্য সামগ্রী,দেশে যাওয়া আসার প্লেন টিকিট কিনে দেওয়া এভাবে ওই কোভেনাকে কব্জা করেছেন তিনি। প্রকল্পের সর্বচ্চ বেতনের কনসালটেন্ট পদ খালি রেখেছেন এবং চলছি মাসের ৯ তারিখ অবসরে যাওয়ার পর ওই পদে যোগদান করবেন এদিকে প্রকল্পে দুইটি ডিপিডির পদ থাকলেও বর্তমান অবদি ডিপিডি -১ পদে নিয়োগ দিলেও ডিপিডি-২ পদে নিয়োগ দেননি। ওই প্রকল্পে কর্মরত সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী তার স্ত্রী আয়েশা নূরী নির্বাহী প্রকৌশলী পদোন্নতির তালিকায় আছেন। তার পদোন্নতি হলেই ডিপিডি -২ পদে তাকে বসাবেন এই মেটিকুলাস ডিজাইন তৈরি করে রেখেছেন মঞ্জুর আলী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button