ইসলাম ধর্মদেশশিক্ষা

মসজিদের তহবিল ও জনকল্যাণ: ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা

মুফতি মাওলানা শামীম আহমেদ: মুসলমানদের সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনের কেন্দ্রস্থল হলো মসজিদ। ইবাদত, জিকির, কুরআন শিক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ইসলামি কর্মকাণ্ড এখানেই পরিচালিত হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদে অকাতরে দান করেন। কিন্তু প্রায়ই একটি প্রশ্ন ওঠে—মসজিদের তহবিলে দান করা অর্থ কি সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠী, শিক্ষা বা চিকিৎসার মতো জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা যাবে?

এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা অত্যন্ত সুস্পষ্ট। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি, সালাত কায়েম করেছে, যাকাত প্রদান করেছে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করেনি।” (সূরা আত-তাওবা: ১৮)

এই আয়াত ইঙ্গিত দেয় যে, মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব মুমিনদের এবং এর জন্য প্রদত্ত দান মসজিদের কাজেই ব্যবহৃত হওয়া উচিত।

একইভাবে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদিসেও মসজিদের জন্য দানের গুরুত্ব ও এর সুনির্দিষ্টতার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন:

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।” (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

এখানে “আল্লাহর জন্য মসজিদ” কথাটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, যা বোঝায় এই দান একটি সুনির্দিষ্ট খাতের জন্য নির্ধারিত।

ইসলামি আইনশাস্ত্রের বিধান

ইসলামি আইনশাস্ত্র বা ফিকহের আলোকে এই বিধান আরও পরিষ্কার হয়। ফিকহের মূলনীতি অনুযায়ী, মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত বা দানকৃত অর্থ একটি আমানত এবং তা যে উদ্দেশ্যে দান করা হয়েছে, সে উদ্দেশ্যেই ব্যয় করতে হবে।

বিশেষ করে হানাফি ফিকহ অনুযায়ী, দাতার অভিপ্রায় বা নিয়ত এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

  • নির্দিষ্ট দান: যদি কোনো দাতা ভাবে “মসজিদের জন্য” বা “মসজিদের কাজে” ব্যবহারের কথা বলে অর্থ দেন, তবে সেই অর্থ শুধুমাত্র মসজিদ-সম্পর্কিত কাজেই ব্যয় করা যাবে। যেমন:
    • মসজিদ নির্মাণ বা সংস্কার।
    • বিদ্যুৎ, পানি বা অন্যান্য বিল পরিশোধ।
    • ইমাম ও মুয়াজ্জিনের বেতন-ভাতা প্রদান।
    • মসজিদভিত্তিক ধর্মীয় শিক্ষা বা দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা।
  • সাধারণ দান: পক্ষান্তরে, যদি কোনো দাতা কোনো খাত নির্দিষ্ট না করে সাধারণভাবে “আল্লাহর রাস্তায়” বা “সাদকা” হিসেবে দান করেন, তবে সেই অর্থ মসজিদের প্রয়োজন পূরণের পর জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন খাতে, যেমন—দরিদ্র সহায়তা, এতিমদের ভরণপোষণ, শিক্ষা বা চিকিৎসায় ব্যয় করা বৈধ।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

সুতরাং, মসজিদের নামে সংগৃহীত তহবিল জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়, যদি না দাতারা তেমন কোনো অনুমতি দিয়ে থাকেন। এটি একটি আমানত, যার রক্ষণাবেক্ষণ করা মসজিদ কমিটির অপরিহার্য দায়িত্ব। জনসেবার জন্য আলাদা তহবিল গঠন করে বা দাতাদের কাছ থেকে সাধারণ সাদকা হিসেবে অর্থ সংগ্রহ করে তা পরিচালনা করাই ইসলামের সঠিক নির্দেশনা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button