ইসলাম ধর্ম

ফেরেশতা জগৎ: নূরের তৈরি সম্মানিত সৃষ্টির পরিচয়কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাদের বৈশিষ্ট্য ও জীবনব্যবস্থা

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলামের বিশ্বাসীদের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো ফেরেশতা জগতের প্রতি ঈমান। আল্লাহ তাআলার এই সম্মানিত সৃষ্টি জগৎ অপার বিস্ময়ে পরিপূর্ণ, যাদেরকে তিনি নূর বা জ্যোতি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাদের প্রকৃত সংখ্যা, গঠন এবং ক্ষমতা সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহই অবগত। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে আমরা তাদের বিষয়ে যতটুকু জানতে পারি, তাতেই তাদের প্রতি এক গভীর শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস জন্মায়।

ঈমানের ছয়টি স্তম্ভের মধ্যে ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা দ্বিতীয়। এর প্রতি সামান্যতম অবিশ্বাসও ঈমানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে, যা বিখ্যাত ‘হাদিসে জিবরিল’ দ্বারা প্রমাণিত।

ফেরেশতাদের অনন্য বৈশিষ্ট্য

কুরআন ও হাদিসের আলোকে ফেরেশতাদের কতিপয় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে, যা তাদের মানব ও অন্যান্য সৃষ্টি থেকে পৃথক করে।

১. নিরঙ্কুশ আনুগত্য ও দায়িত্বশীলতা
ফেরেশতারা হলেন মহান আল্লাহর সবচেয়ে অনুগত ও বাধ্যগত সৃষ্টি। বিশ্বজগতের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আল্লাহ তাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, তারা বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি ছাড়াই তা পালন করেন। তারা কখনো আল্লাহর আদেশের অবাধ্য হন না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন:
“তারা (ফেরেশতাগণ) আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তাদেরকে যা করতে আদেশ করা হয়, তারা তাই করে।” (সূরা আত-তাহরিম: ৬)

২. বিরতিহীন ইবাদত ও গুণকীর্তন
ফেরেশতারা ক্লান্তিহীনভাবে দিবা-রাত্রি আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনায় (তাসবিহ) মগ্ন থাকেন। ইবাদতে তাদের কোনো ক্লান্তি বা অবসাদ স্পর্শ করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“তারা রাত্রিদিন তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করে এবং ক্লান্ত হয় না।” (সূরা আল-আম্বিয়া: ২০)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে: “ফেরেশতাগণ তাদের পালনকর্তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং পৃথিবীবাসীদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে।” (সূরা আশ-শূরা: ৫)

তাদের ইবাদতের ব্যাপকতা বোঝাতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি হাদিসে এই বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি সাহাবিদের বলেন, “আমি তো আকাশের কটকট শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আর এ শব্দ করায় তার কোনো দোষ নেই। তার মাঝে অর্ধহাত পরিমাণ জায়গাও খালি নেই, যেখানে কোনো না কোনো ফেরেশতা সিজদা অথবা কিয়াম অবস্থায় নেই।” (ত্বাবারানী, সিলসিলা সহীহাহ: ৮৫২)

৩. লিঙ্গ বিভাজন ও জাগতিক চাহিদামুক্ত
ফেরেশতাদের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো, তারা জাগতিক কামনা-বাসনা ও প্রবৃত্তি (শাহওয়াত) থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তাদের কোনো লিঙ্গ পরিচয় নেই; তারা পুরুষও নন, নারীও নন। তৎকালীন আরবের কাফেররা ফেরেশতাদের ‘আল্লাহর কন্যা’ বলে যে ধারণা পোষণ করত, তা খণ্ডন করে আল্লাহ বলেন:
“তারা (কাফেররা) দয়াময় আল্লাহর বান্দা ফেরেশতাদেরকে নারী স্থির করেছে। তারা কি তাদের সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছিল?” (সূরা আয-যুখরুফ: ১৯)

যেহেতু তাদের মধ্যে কোনো কামনা-বাসনা নেই, তাই মানব ও জিন জাতির মতো তাদের বিয়ে, সংসার বা সন্তান-সন্ততির প্রয়োজন হয় না। তারা বংশ বিস্তার করে না। একইভাবে, পানাহার, ঘুম, মল-মূত্র ত্যাগসহ যাবতীয় মানবিক চাহিদা থেকেও তারা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত।

বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ ‘তাফসীরে রাজী’-তে উল্লেখ করা হয়েছে, “আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, ফেরেশতাগণ পানাহার করেন না, বিবাহ করেন না। তারা দিবা-রাত্রি আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করেন এবং এতে তারা ক্লান্ত হন না।”

ফেরেশতাদের জগৎ সম্পর্কে এই স্বচ্ছ ধারণা একজন মুমিনের ঈমানকে আরও দৃঢ় ও পরিপূর্ণ করে তোলে এবং আল্লাহর সৃষ্টিজগতের বিশালতা ও মহিমা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button