
নদীর পাড়েই ভ্রাম্যমাণ বাজার, চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ‘নিষিদ্ধ’ ইলিশ
অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: সরকারি নিষেধাজ্ঞা কেবল কাগজে-কলমে, শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের মেঘনা ও এর শাখা নদীগুলোতে বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। মা ইলিশ রক্ষায় দেশব্যাপী ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চললেও এখানে থেমে নেই ইলিশ শিকার। প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে জেলেরা দিন-রাত জাল ফেলে মা ইলিশ ধরছেন এবং নদীর পাড়েই অস্থায়ী বাজার বসিয়ে তা বিক্রি করছেন।
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্রি, কোদালপুর ও আলাওলপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় এক অবাধ বেচাকেনার চিত্র। ভোর পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে কোদালপুরের ছৈয়াল কান্দির বাইদ্যা পাড়া, আলাওলপুরের চরজালালপুর এবং কুচাইপট্রি আশ্রয়ণ কেন্দ্র সংলগ্ন খালে একের পর এক ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ট্রলার ভিড়ছে। সারারাত নদী থেকে ধরা টাটকা ইলিশে বোঝাই এসব নৌকা।
খালের মধ্যেই নৌকা থেকে নৌকায় চলছে ইলিশের দরদাম। পাইকার, আড়তদার এবং দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ ক্রেতাদের ভিড়ে নদীর পাড় তখন জমজমাট। কেউ দুই-চার হালি কিনে বাড়ির পথ ধরছেন, আর পাইকাররা ঝুড়ি বোঝাই করে অটোরিকশায় তুলে নিচ্ছেন ইলিশ।
তবে এই অবৈধ বাজারেও স্বস্তি নেই সাধারণ ক্রেতাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ভেবেছিলাম নিষেধাজ্ঞা থাকায় হয়তো কিছুটা কম দামে ইলিশ কিনতে পারব। কিন্তু বড় বড় পাইকার ও আড়তদাররা সব মাছ চড়া দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছে, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।”
ঋণের বোঝা নাকি অসাধু চক্র?
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার পেছনে জেলেরা তাদের আর্থিক দুরবস্থার কথা বলছেন। একাধিক জেলের ভাষ্য, “সারা মৌসুম নদীতে মাছ পাইনি। মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ জমে পাহাড় হয়েছে। এখন নদীতে নামলে দিনে ১০-১২ হাজার টাকার মাছ পাওয়া যায়, যা দিয়ে ঋণের কিছুটা হলেও শোধ করা সম্ভব।”
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ও অভিযোগ
স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি অসাধু চক্রের সঙ্গে আঁতাত করেই এ অবৈধ কার্যক্রম চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, নৌপুলিশ ও মৎস্য কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেই জেলেরা নির্বিঘ্নে মাছ ধরছে। যদিও চাঁদপুর নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের অভিযান নিয়মিত চলছে। বিশাল নদীতে সব জায়গায় একসঙ্গে নজরদারি করা কঠিন। তবুও আমরা জেলে, জাল ও মাছ জব্দ করছি।”
গোসাইরহাট উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা লোকবল সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেন, “মেঘনা, জয়ন্তী ও এর শাখা নদীগুলোতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। সীমিত জনবল নিয়েও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু কিছু অসাধু জেলে বারবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করছে।”
এদিকে, কোদালপুর মাছঘাটের ব্যবসায়ীরাও দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। ঘাটের শীর্ষ পর্যায়ের একজন ব্যবসায়ী বলেন, “আমি এখন দায়িত্বে নেই। যারা আছেন, তারাই বলতে পারবেন কীভাবে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ বিক্রি হচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুত ও বিক্রি নিষিদ্ধ। এই সময়ে একটি মা ইলিশ প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ ডিম ছাড়ে, যা দেশের ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।



