বিশ্লেষণস্বাস্থ্য

কটন বাড: কানের উপকারের বদলে অপকারই বেশি | মানবদেহের নিখুঁত সুরক্ষাব্যবস্থা ও আমাদের ভুল অভ্যাস

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: কান পরিষ্কারের জন্য কটন বাড ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক অতি সাধারণ অভ্যাস। আমরা মনে করি, এটি কানকে পরিষ্কার ও সুরক্ষিত রাখে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্র বলছে সম্পূর্ণ বিপরীত কথা। যে বস্তুটি আমরা কানের উপকারের জন্য ব্যবহার করছি, সেটিই হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক ক্ষতির কারণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কটন বাড ব্যবহারের প্রক্রিয়াটিই মূলত ভুল। এটি কানের ভেতরের ময়লা (Earwax) বের করে আনার বদলে উল্টো তাকে আরও গভীরে, কানের পর্দার দিকে ঠেলে দেয়। ফলে ময়লা আর প্রাকৃতিকভাবে বেরিয়ে আসতে পারে না, যা থেকে সৃষ্টি হয় নানাবিধ জটিলতা।

কটন বাড ব্যবহারের ভয়াবহ ঝুঁকি:

১. শক্ত ময়লার জট (Impacted Wax): কটন বাডের চাপে ময়লা জমে শক্ত হয়ে যায়, যা কানের পথ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া, কানে তীব্র ব্যথা, ভোঁ ভোঁ শব্দ করা এমনকি মাথা ঘোরানোর মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

২. ইনফেকশন ও রক্তপাত: কানের ভেতরের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল। কটন বাডের সামান্য খোঁচাতেই সেখানে সূক্ষ্ম ক্ষত তৈরি হতে পারে, যা থেকে রক্তপাত এবং পরবর্তীতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ‘ওটাইটিস এক্সটার্না’ (Otitis Externa) নামক ইনফেকশন হতে পারে।

৩. স্থায়ী বধিরতা: অসাবধানতাবশত সামান্য জোরে খোঁচা লাগলে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার মতো গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে এই আঘাত এতটাই মারাত্মক হতে পারে যে, তা স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি কেড়ে নিতে পারে।

কানের ময়লা কি আসলেই ‘ময়লা’?

চিকিৎসকরা বলছেন, আমরা যাকে ‘ময়লা’ ভেবে অপসারণের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ি, সেই ইয়ারওয়্যাক্স আসলে কানের জন্য একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষাকবচ। এটি ধুলোবালি, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য বহিরাগত বস্তুকে কানের গভীরে প্রবেশ করতে বাধা দেয় এবং কানকে সুরক্ষিত রাখে। কান একটি স্বয়ংক্রিয় অঙ্গ, যা নিজস্ব প্রক্রিয়ায় নিজেকে পরিষ্কার করতে সক্ষম। তাই বাইরে থেকে কিছু দিয়ে কান পরিষ্কারের কোনো প্রয়োজনই নেই। যদি কানে অস্বস্তি, ব্যথা বা কম শোনার মতো সমস্যা হয়, তবে নিজে কিছু না করে দ্রুত একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই একমাত্র নিরাপদ উপায়।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার আড়ালে সৃষ্টির নিখুঁত নকশা

কানের এই স্বয়ংক্রিয় সুরক্ষাব্যবস্থা আমাদের মানবদেহের এক অসাধারণ ও নিখুঁত নকশার দিকেই ইঙ্গিত করে। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই আমরা বুঝতে পারি, এর পেছনে রয়েছে এক মহান কারিগরের বিস্ময়কর প্রকৌশল। ঠিক যেমন মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের চোখের সুরক্ষার জন্য চোখের পাপড়ি দিয়েছেন, যা ধুলাবালি থেকে চোখকে রক্ষা করে। নাকের ভেতরে দিয়েছেন ক্ষুদ্র পশম, যা শ্বাসের সাথে ময়লা ঢুকতে বাধা দেয়।

বস্তুত, মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গেই স্রষ্টা এমন নিখুঁত সুরক্ষার ব্যবস্থা করে রেখেছেন, যা আমাদের সুরক্ষিত রাখার জন্য সার্বক্ষণিক ডাক্তারের মতো কাজ করে চলেছে। আমাদের ভুল অভ্যাসগুলোই প্রায়শই এই প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে এবং বিপদ ডেকে আনে।

সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button