মিথ্যা অপবাদ: কুরআন ও হাদীসের আলোকে এক ধ্বংসাত্মক পাপ
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্টকারী ঘৃণ্যতম অপরাধগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মিথ্যা অপবাদ বা অপপ্রচার। সামান্য সন্দেহের বশে বা ব্যক্তিগত আক্রোশে অন্যের সম্মানহানি করার এই প্রবণতা সম্পর্কে ইসলামে অত্যন্ত কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাদীসে মিথ্যা অপবাদ রটনাকারীর জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে ভয়াবহ শাস্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
কুরআনের কঠোর সতর্কবার্তা
মিথ্যা অপবাদের পাপকে আল্লাহ তা’আলা এতটাই গুরুতর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন যে, এর জন্য দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতেই অভিশাপ ও কঠিন শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের সূরা আন-নূরের ২৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
“যারা সচ্চরিত্রা, সরলমনা মুমিন নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত। আর তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।”
এই আয়াতটির ভয়াবহতা হলো, এখানে স্বয়ং আল্লাহ মিথ্যা অপবাদ রটনাকারীকে উভয় জগতেই “অভিশপ্ত” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যা অন্য অনেক পাপের ক্ষেত্রে বলা হয়নি।
একইভাবে, শুধু নারী নয়, কোনো মুমিন পুরুষ বা নারীকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া বা তাদের ওপর এমন দোষ চাপিয়ে দেওয়া যা তারা করেননি, সেটিকেও সুস্পষ্ট গুনাহ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সূরা আল-আহযাবের ৫৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন:
“যারা মুমিন পুরুষ ও নারীদের কোনো অপরাধ ছাড়াই কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে।”
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট যে, নিরপরাধ মানুষকে কথার দ্বারা কষ্ট দেওয়া বা তাদের সম্মানহানি করা আল্লাহর দৃষ্টিতে একটি মারাত্মক অপরাধ।
হাদীসে বর্ণিত ভয়াবহ পরিণতি
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর বিভিন্ন হাদীসে মিথ্যা অপবাদের পরকালীন পরিণতি সম্পর্কে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। অপবাদ রটনাকারী কিয়ামতের মাঠে কীভাবে দেউলিয়া বা নিঃস্ব হয়ে যাবে, তার এক চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন:
“যে ব্যক্তি (দুনিয়াতে) তার ভাইয়ের সম্মানহানি করেছে বা অন্য কোনোভাবে তার প্রতি জুলুম করেছে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নেয়—সেই দিন আসার আগে, যেদিন তার কাছে কোনো দিনার বা দিরহাম থাকবে না। সেদিন তার কোনো নেক আমল থাকলে তা থেকে জুলুমের সমপরিমাণ কেটে নেওয়া হবে। আর যদি নেক আমল না থাকে, তবে অত্যাচারিত ব্যক্তির গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।” (সহীহ বুখারী: ২৪৪৯)
এর অর্থ হলো, মিথ্যা অপবাদকারীর সমস্ত ইবাদত ও নেক আমল তার কাছ থেকে নিয়ে ভুক্তভোগীকে দিয়ে দেওয়া হবে, যা তাকে আখিরাতে চরমভাবে নিঃস্ব করে ফেলবে।
শুধু তাই নয়, সহীহ মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদীসে এই পাপের ভয়াবহতা বোঝাতে রাসূল (ﷺ) আরও কঠোর ভাষা প্রয়োগ করেছেন, যা থেকে বোঝা যায় এর শাস্তি কতটা গুরুতর। তিনি বলেছেন, একজন মুমিনের প্রতি অপবাদ আরোপ করা জাহান্নামের আগুনের চেয়েও ভয়ংকর হতে পারে।
সুতরাং, কুরআন ও হাদীসের আলোকে এটি সুস্পষ্ট যে, মিথ্যা অপবাদ কেবল একটি সামাজিক অপরাধই নয়, বরং এটি একটি ধ্বংসাত্মক পাপ, যা একজন ব্যক্তির দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই বরবাদ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।



