
ডেস্ক রিপোর্ট: ‘সিরিয়াল কিলার’ বা ‘ধারাবাহিক খুনি’ শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে বিভিন্ন দেশের কুখ্যাত সব অপরাধীর মুখ। এই তালিকায় সবার উপরে যাদের নাম আসে, তাদের মধ্যে অন্যতম কলম্বিয়ার লুইজ গারাভিতো এবং পেদ্রো লোপেজ, যাদের হাতে সম্ভাব্য নিহতের সংখ্যা তিন শতাধিক। কিন্তু এক নতুন এবং ভয়াবহ পরিসংখ্যানে এই বিতর্ক উস্কে দেওয়া হয়েছে যে, পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস সিরিয়াল কিলারদের তালিকার শীর্ষস্থানটি বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের দখলে থাকতে পারে।
অভিযোগ উঠেছে, সাবেক সেনাকর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে নিজ হাতে ১০৩০টি ‘কনফার্মড’ হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে, যা তাকে এই তালিকার শীর্ষে স্থান দেয়। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন পরিসংখ্যান নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট শাসনকালে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের এক শীতল চিত্রকে সামনে নিয়ে আসে।
জিয়াউল আহসানই একমাত্র নাম নয়। মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের কথাও এখানে প্রাসঙ্গিক। অভিযোগ অনুযায়ী, টেকনাফে কর্মরত থাকাকালীন মাত্র ২২ মাসে তার হাতে ২০৪ জন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যাটিও ‘কনফার্মড’ বলে দাবি করা হয়। যদি শুধু নিশ্চিত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বিবেচনা করা হয়, তবে প্রদীপ কুমার দাশ কলম্বিয়ার পেদ্রো লোপেজকে ছাড়িয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ‘সিরিয়াল কিলার’ হিসেবে আবির্ভূত হন।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়টি হলো, এই দুজনই ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলো রাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্র ব্যবহার করেই করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সমালোচকদের মতে, এই ঘটনাগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট শাসনকালে বাংলাদেশে সংঘটিত হওয়া হাজার হাজার ‘ক্রসফায়ার’ নামক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অংশ মাত্র। অভিযোগ রয়েছে যে, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংঘটিত গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হলে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ১০ জন সিরিয়াল কিলারের মধ্যে অন্তত তিন থেকে চারজনই এই সরকারের ছত্রছায়ায় তৈরি হয়েছেন বলে দেখা যেতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং সমালোচকদের পক্ষ থেকে দাবি উঠছে যে, উইকিপিডিয়াসহ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সিরিয়াল কিলারদের তালিকায় জিয়াউল আহসান এবং প্রদীপ কুমার দাশের নাম অন্তর্ভুক্ত করে এই রাষ্ট্রীয় অপরাধগুলোর একটি বৈশ্বিক চিত্র তুলে ধরা হোক। এটি কেবল একটি পরিসংখ্যানগত সংযোজনই নয়, বরং রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতাকেও আন্তর্জাতিক পরিসরে উন্মোচন করার একটি প্রয়াস।



