ইসলাম ধর্ম

উম্মুল কিতাব সূরা ফাতিহা: কুরআনের প্রবেশদ্বার ও অসীম কল্যাণের ভান্ডার

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: পবিত্র কুরআনের প্রথম এবং সর্বাধিক পঠিত সূরা হলো ‘আল-ফাতিহা’, যার অর্থ ‘উন্মোচনকারী’ বা ‘প্রবেশদ্বার’। মাত্র সাতটি আয়াতে গঠিত এই সূরাটি সমগ্র কুরআনের সারসংক্ষেপ এবং ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের ধারক। এটি কেবল একটি সূরা নয়, বরং এটি আল্লাহর সাথে বান্দার কথোপকথনের এক अनुपম মাধ্যম এবং নামাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সূরা আল-ফাতিহা: আরবি, উচ্চারণ ও বাংলা অর্থ

আয়াতআরবিবাংলা উচ্চারণবাংলা অর্থ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِবিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমশুরু করছি আল্লাহর নামে, যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَআলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিনযাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِআর-রাহমানির রাহিমযিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِমালিকি ইয়াওমিদ্দিনযিনি বিচার দিনের মালিক।
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তাইনআমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিমআমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন।
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَসিরাতাল্লাজিনা আন’আমতা আলাইহিম, গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালাদ দাল্লিনতাদের পথে, যাদেরকে আপনি পুরস্কৃত করেছেন; তাদের পথে নয়, যারা অভিশপ্ত এবং যারা পথভ্রষ্ট।

ফজিলত ও তাৎপর্য: কেন এই সূরা এত গুরুত্বপূর্ণ?

সূরা আল-ফাতিহার মর্যাদা ও ফজিলত অপরিসীম, যা বিভিন্ন হাদিস ও ইসলামিক বর্ণনায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে।

নামাজের প্রাণ: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বাণী অনুযায়ী, “যে ব্যক্তি (নামাজে) সূরা ফাতিহা পাঠ করল না, তার নামাজ অসম্পূর্ণ”। এটি নামাজের প্রতিটি রাকাতের জন্য অপরিহার্য, যা একে ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে।

আরোগ্য ও সুরক্ষা: এই সূরাটি শারীরিক ও আধ্যাত্মিক আরোগ্যের জন্য এক শক্তিশালী মাধ্যম। হাদিসে একে “সূরাতুশ শিফা” বা আরোগ্য দানকারী সূরা হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণিত আছে, যেকোনো অসুস্থতার জন্য ৪০ বার সূরা ফাতিহা পাঠ করে পানিতে ফুঁ দিয়ে সেই পানি পান করলে বা শরীরে ছিটিয়ে দিলে আল্লাহ তায়ালা সুস্থতা দান করেন। এছাড়া, এটি শয়তানের কুমন্ত্রণা, জাদু এবং যাবতীয় অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার জন্য এক অব্যর্থ রক্ষাকবচ।

কুরআনের মূল: সূরা ফাতিহাকে “উম্মুল কিতাব” বা “কিতাবের মা” বলা হয়, কারণ এটি সমগ্র কুরআনের মূলভাব ও শিক্ষাকে ধারণ করে। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং একে “সাব’আ মাসানী” অর্থাৎ “বারবার পঠিতব্য সাতটি আয়াত” এবং “আল-কুরআনুল আজিম” বা “মহাগ্রন্থ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

আধ্যাত্মিক উন্নতি ও প্রার্থনা: এই সূরার মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর প্রশংসা করেন, তাঁর সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেন এবং তাঁর কাছে সরল পথে চলার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করেন। এটি বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে এক গভীর আধ্যাত্মিক সেতুবন্ধন তৈরি করে।

একটি বর্ণনায় এসেছে, সূরা ফাতিহা পাঠের সওয়াব পূর্ববর্তী প্রধান চার আসমানি কিতাব—তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও ফুরকান (কুরআন) পাঠের সমতুল্য। এর প্রতিটি আয়াত মুমিনের জন্য রহমত, হেদায়েত এবং অফুরন্ত কল্যাণের উৎস।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button