‘রব’ নামের তাৎপর্য: কেন কুরআন ও সালাতে এই নামের ব্যবহার এত গুরুত্বপূর্ণ?

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: আল্লাহ তায়ালার অগণিত সুন্দর নাম রয়েছে, যার মধ্যে ‘আল্লাহ্’ নামটি তাঁর একক সত্তার পরিচায়ক। তবে পবিত্র কুরআন ও সালালের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘আল্লাহ্’ নামের পাশাপাশি ‘রব’ নামটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই ব্যবহারের পেছনে রয়েছে এক গভীর আধ্যাত্মিক ও তাৎপর্যপূর্ণ রহস্য, যা স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির সম্পর্ককে সুস্পষ্ট করে তোলে।
‘রব’ শব্দের বহুমাত্রিক অর্থ
‘রব’ (رَبّ) শব্দটি শুধু ‘প্রভু’ বা ‘মালিক’ অর্থেই সীমাবদ্ধ নয়। এর অর্থের পরিধি আরও ব্যাপক, যার মধ্যে রয়েছে:
- প্রতিপালক: যিনি সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিনিয়ত রিজিক, আলো, বাতাস দিয়ে লালন-পালন করছেন।
- নিয়ন্ত্রণকারী: যিনি আসমান ও জমিনের সবকিছুর ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান করেন।
- পূর্ণতাদানকারী: যিনি একটি বস্তুকে তার বিকাশের প্রতিটি স্তরে পরিচর্যা করে পরিপূর্ণতার দিকে নিয়ে যান।
- অভিভাবক ও রক্ষক: যিনি তাঁর সৃষ্টিকে সকল বিপদ থেকে সুরক্ষা দেন এবং আশ্রয় দান করেন।
কুরআনের শুরু ও শেষে ‘রব’
পবিত্র কুরআনের সূচনা হয়েছে ‘আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’ (যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালকের জন্য) বাক্য দিয়ে। এখানে আল্লাহকে জগৎসমূহের ‘রব’ বা প্রতিপালক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় যে, আমাদের অস্তিত্ব ও বেড়ে ওঠা সম্পূর্ণরূপে তাঁর প্রতিপালনের উপর নির্ভরশীল।
একইভাবে, কুরআনের শেষ সূরা আন-নাসে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আশ্রয় প্রার্থনার সময় বলা হয়েছে ‘কুল আউযু বিরাব্বিন নাস’ (বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি মানুষের রবের কাছে)। এখানে আল্লাহ মানুষের রক্ষক ও অভিভাবক হিসেবে আবির্ভূত হন, যিনি সকল অনিষ্ট থেকে পূর্ণ সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
সালাতে বিনয় ও নির্ভরতার প্রতীক
সালাতের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ—রুকু ও সিজদা—যেখানে বান্দা আল্লাহর সামনে সর্বোচ্চ বিনয় প্রকাশ করে, সেখানেও ‘রব’ নামটি ব্যবহৃত হয়।
- রুকুতে: বান্দা যখন বিনয়ের সাথে অবনত হয়, তখন বলে ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ (আমার মহান রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি)। এই শারীরিক দুর্বলতার মুহূর্তে আমরা তাঁর মহান প্রতিপালকত্বের শক্তিকে স্মরণ করি।
- সিজদায়: বান্দা যখন আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয় এবং নিজেকে সমর্পণের সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যায়, তখন বলে ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা’ (আমার সর্বোচ্চ রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি)। এই চরম বিনয়ের মুহূর্তে আমরা ঘোষণা করি যে, আমাদের প্রতিপালকই সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী।
দোয়া ও প্রার্থনায় ‘রব্বি’ সম্বোধন
কুরআনের অসংখ্য দোয়ায় ‘রব্বি’ (হে আমার রব) সম্বোধনটি ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন, ‘রাব্বি জিদনি ইলমা’ (হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন)। এর কারণ হলো, প্রার্থনার সময় বান্দা তার প্রতিপালক, প্রয়োজন পূরণকারী এবং দাতা সত্তার প্রতিই মনোনিবেশ করে। ‘রব্বি’ সম্বোধনটি বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে একটি গভীর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও নির্ভরতার অনুভূতি তৈরি করে, যা দোয়ার প্রাণ।
মূলত, ‘আল্লাহ্’ নামটি মহান স্রষ্টার একক ও সত্তাগত নাম। অন্যদিকে, ‘রব’ নামটি স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির সম্পর্ককে প্রকাশ করে—যেখানে তিনি প্রতিপালক, রক্ষক এবং ব্যবস্থাপক। ইবাদত, দোয়া এবং আশ্রয়ের প্রতিটি মুহূর্তে ‘রব’ নামের ব্যবহার বান্দার নির্ভরতা ও আল্লাহর প্রতিপালকত্বের এক গভীর বন্ধনকে ফুটিয়ে তোলে।



