লজ্জার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন উম্মুল মু’মিনিন আয়েশা (রা.)

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: লজ্জা ও হায়া নারীর ভূষণ। ইসলামে লজ্জাকে ঈমানের অঙ্গ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই লজ্জার এক অতুলনীয় ও শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন বিশ্বাসীদের মাতা ‘উম্মুল মু’মিনিন’ হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)। মৃত ব্যক্তির সামনেও তিনি পর্দার বিধান মানার ক্ষেত্রে সামান্যতম ছাড় দেননি, যা বর্তমান আধুনিক সমাজের জন্য এক অনন্য উদাহরণ হয়ে রয়েছে।
ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে হাদিসগ্রন্হ ‘মিশকাতুল মাসাবিহ’-তে। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, “আমি সেই ঘরে প্রবেশ করতাম যেখানে আল্লাহর রাসুল (সা.) এবং আমার পিতা (আবু বকর (রা.)) শায়িত আছেন এবং আমি আমার চাদর খুলে রাখতাম এই ভেবে যে, এখানে তো আমার স্বামী ও পিতাই রয়েছেন।” তাঁদের উভয়ের সঙ্গেই হযরত আয়েশা (রা.)-এর মাহরামের সম্পর্ক ছিল, অর্থাৎ তাঁদের সামনে পর্দা করা বাধ্যতামূলক ছিল না।
কিন্তু পরিস্থিতি বদলে যায় যখন খলিফা হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.)-কে ইন্তেকালের পর হযরত আয়েশা (রা.)-এর অনুমতিতে একই কক্ষে দাফন করা হয়। হযরত উমার (রা.) ছিলেন হযরত আয়েশা (রা.)-এর জন্য গায়রে মাহরাম, অর্থাৎ এমন একজন ব্যক্তি যার সঙ্গে পর্দা করা অপরিহার্য। যদিও তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন, হযরত আয়েশা (রা.)-এর লজ্জাশীলতা ও আল্লাহভীতি এতটাই গভীর ছিল যে, তিনি মৃত ব্যক্তির সামনেও পর্দার বিধান পালনে কোনো শিথিলতা দেখাননি।
তিনি বর্ণনা করেন, “আল্লাহর কসম, যখন থেকে উমার (রা.)-কে সেখানে দাফন করা হলো, আমি উমারের প্রতি লজ্জার কারণে শরীরে ভালোভাবে কাপড় না জড়িয়ে সেই ঘরে প্রবেশ করিনি।” এই ঘটনাটি ইমাম আহমাদ (রহ.) বর্ণনা করেছেন।
উম্মুল মু’মিনিন হযরত আয়েশা (রা.), যিনি ছিলেন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী, বুদ্ধিমতী ও মর্যাদাসম্পন্ন নারী, তাঁর এই একটি ঘটনাই লজ্জা ও আত্মমর্যাদাবোধের সর্বোচ্চ মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেয়। যেখানে তিনি একজন মৃত গায়রে মাহরাম ব্যক্তির উপস্থিতিতেও নিজেকে আবৃত রাখাকে অপরিহার্য মনে করেছেন, সেখানে বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা জনসমক্ষে নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করা নারীদের জন্য এটি একটি গভীর চিন্তার বিষয়।
হযরত আয়েশা (রা.)-এর এই জীবনাদর্শ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, লজ্জা কেবল জীবিত মানুষের সামনেই নয়, বরং তা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের সত্তার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর এই উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের জীবনে লজ্জা ও শালীনতাকে ফিরিয়ে আনা প্রত্যেক মুসলিম নারীর জন্য অনুকরণীয়।



