ইসলাম ধর্ম

সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রের বিধান: বিভ্রান্তি নিরসনে কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনা

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, যা মানুষের আত্মিক, মানসিক ও সামাজিক সুরক্ষার জন্য সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রদান করেছে। এই নীতিমালার আলোকেই সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রকে মুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে এবং সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের পথ উন্মুক্ত করে। যদিও আধুনিক যুগে এ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়, তবে কুরআন ও হাদিসের অকাট্য প্রমাণ এই নিষেধাজ্ঞার পক্ষেই সাক্ষ্য দেয়।

সামাজিক ও আধ্যাত্মিক অবক্ষয়ে সংগীতের ভূমিকা

ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, সংগীত মানুষের অন্তর থেকে আল্লাহর স্মরণকে মুছে দেয় এবং তাকে এক বস্তুবাদী জগতের দিকে ঠেলে দেয়। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অবৈধ প্রেম, অশ্লীলতা এবং নৈতিক অবক্ষয়ের প্রসারে এর ভূমিকা অত্যন্ত বিধ্বংসী। সংগীত দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তরুণ-তরুণীরা প্রায়শই ধর্ষণ, গুম, এসিড নিক্ষেপ এবং পরকীয়ার মতো জঘন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, যা পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে।

এর আধ্যাত্মিক ক্ষতি আরও গভীর। যে অন্তর সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, সেখানে পবিত্র কুরআনের সুমধুর তিলাওয়াত আর প্রভাব ফেলতে পারে না। আল্লাহর কালামের প্রতি আকর্ষণ কমে যায় এবং ইসলামী সংগীতের নির্মল আবেদনও তার কাছে মূল্যহীন মনে হয়। এটি এমন এক আধ্যাত্মিক ব্যাধি, যা ধীরে ধীরে মানুষকে দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

কুরআন ও হাদিসের সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা

সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রের নিষেধাজ্ঞা কোনো অস্পষ্ট বা ধোঁয়াশাচ্ছন্ন বিষয় নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ ‘লাহওয়াল হাদিস’ (অসার কথাবার্তা) ক্রয় করে, যাতে সে बिना ज्ञाনে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করতে পারে এবং আল্লাহর পথকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব।” (সূরা লুকমান: ৬)প্রখ্যাত সাহাবী عبدالله ইবনে মাসউদ (রাঃ) সহ অধিকাংশ তাফসিরকারক ‘লাহওয়াল হাদিস’-এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, এর দ্বারা গান-বাজনাকেই বোঝানো হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই বিষয়টি আরও দ্ব্যর্থহীনভাবে স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেন:

“আমার উম্মতের মধ্যে অবশ্যই এমন একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা ব্যভিচার, রেশমবস্ত্র, মদ এবং বাদ্যযন্ত্রকে (আল-মা‘আযিফ) হালাল মনে করবে।” (সহীহ বুখারী: ৫৫৯০)এই হাদিসে বাদ্যযন্ত্রকে ব্যভিচার ও মদের মতো সুস্পষ্ট হারাম বস্তুর সাথে একত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, যা এর ভয়াবহতা প্রমাণ করে।

আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের অপরিহার্যতা

আধুনিক যুগে কিছু ব্যতিক্রমী মতামতের কারণে অনেকে এই বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হলেও, ইসলামের মূলনীতি হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য। কোনো বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তার সমাধান কুরআন ও সুন্নাহর দিকেই ফিরিয়ে দিতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর… অতঃপর কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতবিরোধ ঘটলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।” (সূরা আন-নিসা: ৫৯)

সংশয়পূর্ণ বিষয় বর্জনের গুরুত্ব

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মুমিনদেরকে সন্দেহজনক বিষয় থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, যা দ্বীন ও সম্মানকে রক্ষা করে। তিনি বলেন:

“হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর উভয়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়, যা অধিকাংশ মানুষ জানে না। যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয় থেকে বেঁচে থাকল, সে তার দ্বীন ও সম্মানকে রক্ষা করল।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রের বিষয়টি সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের মতে সুস্পষ্ট হারাম। তাই হাতেগোনা কিছু ব্যতিক্রমী মতামতের উপর ভিত্তি করে সংশয়ে পতিত হওয়া ঈমানের দুর্বলতার পরিচায়ক।

উপসংহার

অতএব, কুরআন ও হাদিসের অকাট্য প্রমাণের ভিত্তিতে এটি সুস্পষ্ট যে, সমাজে প্রচলিত বাদ্যযন্ত্রসহ সংগীত ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। একজন মুমিনের দায়িত্ব হলো, সকল প্রকার সংশয় ও দ্বিধা त्याग করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশের প্রতি পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করা এবং এই ধ্বংসাত্মক পাপ থেকে তওবা করে ফিরে আসা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন এবং সকল প্রকার হারাম থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দিন। আমীন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button