বাবার তিন দিনের শিক্ষা: নুডলসের বাটিতে জীবনের যে পাঠ লুকিয়ে ছিল

অনলাইন ডেস্ক: বাবা-ই হলেন সন্তানের জীবনের প্রথম শিক্ষক। তাঁর বলা ছোট ছোট কথা আর শেখানো সহজ দর্শনই অনেক সময় সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি গড়ে দেয়। এমনই এক পিতা তাঁর স্বার্থপর সন্তানকে জীবনের তিনটি অমূল্য শিক্ষা দিয়েছিলেন নুডলসের দুটি বাটি দিয়ে, যা সেই সন্তানের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছিল। চলুন, শোনা যাক সেই অসাধারণ গল্পটি।
গল্পের কথক জানাচ্ছেন, ছোটবেলায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বার্থপর। যেকোনো বিষয়ে নিজের লাভ ও সুবিধাটাই বড় করে দেখতেন। তাঁর এই স্বভাবের কারণে ধীরে ধীরে বন্ধুরা তাঁকে ছেড়ে যেতে শুরু করে। একসময় তিনি বন্ধুহীন হয়ে পড়েন। কিন্তু অপরিণত বয়সের কারণে দোষটা নিজের কাঁধে না নিয়ে তিনি ভাবতেন, বন্ধুরাই আসলে হিংসুটে এবং তাঁর ভালো চায় না। তাঁর বাবা নীরবে ছেলের এই পরিবর্তন লক্ষ করলেও মুখে কিছুই বলতেন না।
প্রথম দিনের শিক্ষা: চোখ যা দেখে, তা সত্যি নয়
একদিন রাতে বাবা দুটি নুডলসের বাটি নিয়ে ছেলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। একটি বাটিতে সেদ্ধ নুডলসের উপরে একটি খোসা ছাড়ানো ডিম রাখা ছিল, অন্য বাটিটি ছিল শুধু নুডলসের। বাবা ছেলেকে যেকোনো একটি বেছে নিতে বললেন।
সেকালে চীনে ডিম ছিল এক দুর্লভ খাবার, যা শুধু উৎসবের দিনেই জুটত। তাই ছেলেটি স্বাভাবিকভাবেই ডিমসহ বাটিটিই তুলে নিল। কিন্তু খাওয়ার সময় সে অবাক হয়ে দেখল, বাবার বাটিতে নুডলসের নিচে দুটি ডিম লুকানো রয়েছে। নিজের পছন্দে তার ভীষণ আফসোস হলো।
খাওয়া শেষে বাবা মৃদু হেসে বললেন, “মনে রেখো, চোখ যা দেখে, তা সবসময় সত্যি হয় না। শুধু বাহ্যিক রূপ দেখে কোনো ব্যক্তি বা পরিস্থিতি বিচার করলে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।”
দ্বিতীয় দিনের শিক্ষা: অভিজ্ঞতা সবসময় সঠিক পথ দেখায় না
পরদিন রাতেও বাবা একইভাবে নুডলসের দুটি বাটি সাজিয়ে ছেলেকে ডাকলেন। একটিতে ডিম ছিল, অন্যটিতে ছিল না। আগের দিনের অভিজ্ঞতা থেকে ছেলে ভাবল, যা দেখা যায় তা সত্যি নয়। তাই সে চালাকি করে ডিম ছাড়া বাটিটিই বেছে নিল, এই ভেবে যে এর নিচেই নিশ্চয়ই ডিম লুকানো আছে। কিন্তু খেতে গিয়ে সে দেখল, তার বাটিতে কিছুই নেই।
বাবা এবারও হাসলেন আর বললেন, “অভিজ্ঞতা সবসময় সঠিক পথের দিশা দেয় না। জীবন বড়ই বিচিত্র এবং অপ্রত্যাশিত। চলার পথে অনেক মরীচিকার দেখা মিলবে। জীবন তোমাকে যা দেয়, তা মেনে নিতে শিখলে কষ্ট কম পাবে। নিজের বুদ্ধি আর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাবে ঠিকই, কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জীবনের হাতেই ছেড়ে দিতে হয়।”
তৃতীয় দিনের শিক্ষা: কৃতজ্ঞতা এবং ত্যাগই জীবনের শ্রেষ্ঠ ধর্ম
তৃতীয় দিনেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। খাবার টেবিলে নুডলসের দুটি বাটি—একটিতে ডিম আছে, অন্যটিতে নেই। কিন্তু এবার ছেলেটি ভিন্ন একটি কাজ করল। সে বাবাকে বলল, “বাবা, আজ আগে তুমি বেছে নাও। কারণ তুমি আমাদের পরিবারের প্রধান, তোমার রোজগারেই আমাদের সংসার চলে। তাই অধিকারটা তোমারই প্রথম।”
ছেলের কথা শুনে বাবার মুখ উজ্জ্বল হাসিতে ভরে উঠল। তিনি ডিমসহ বাটিটি ছেলের দিকে এগিয়ে দিলেন। ছেলে যখন খেতে শুরু করল, সে বিস্ময়ের সাথে দেখল, তার বাটিতে নুডলসের নিচে দুটি ডিম লুকানো আছে।
খাওয়া শেষে বাবা ছেলেকে কাছে ডেকে স্নেহভরে তার হাত ধরে বললেন, “মনে রেখো, অন্যের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা এবং তাদের কথা ভাবা মানুষের সেরা গুণ। তুমি যখন অন্যের জন্য করবে, তাদের অগ্রাধিকার দেবে, জীবনও তোমার কথা ভাববে এবং তোমাকে বহুগুণে ফিরিয়ে দেবে।”
গল্পের শেষে সেই সফল ব্যক্তিটি বলেন, “বাবার দেওয়া সেই তিনটি শিক্ষা আমার জীবনের পাথেয় হয়ে রইল। আমি আজীবন তা মেনে চলেছি এবং আশ্চর্য হয়ে দেখেছি, জীবন সত্যিই আমাকে বহুগুণে ফিরিয়ে দিয়েছে। আজ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে, তা জীবনের সেই দানেরই ফসল।”



