জাতীয়দেশবাংলাদেশবিশ্লেষণরাষ্ট্রনীতি

জুলাইযোদ্ধাদের রক্তে ভেজা ‘জুলাই সনদ’: অধ্যাপক এম এ বার্ণিকের দৃষ্টিতে কলঙ্কজনক অধ্যায়

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: ২০২৫ সালের ১৭ অক্টোবর তারিখে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষর’ অনুষ্ঠানটি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অধ্যাপক এম এ বার্ণিক এই আয়োজনকে ‘কলঙ্কজনক অধ্যায়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যেখানে জাতির জন্য রক্ত ঝরানো ‘জুলাইযোদ্ধা’দের চরম অবহেলা ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে।

উপেক্ষিত জুলাইযোদ্ধারা:
অনুষ্ঠানে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, দেশের জন্য আত্মত্যাগকারী, অঙ্গহানির শিকার হওয়া ‘জুলাইযোদ্ধা’দের কাউকেই দাওয়াত করা হয়নি। এই যোদ্ধারা, যারা ২০৪১ সালের জাতির উত্তরণের পথে দুঃসাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন, আজ তারাই রাষ্ট্র কর্তৃক উপেক্ষিত।

পুলিশি বর্বরতা ও নির্লজ্জ অবহেলা:
দাওয়াত না পেয়েও কিছু জুলাইযোদ্ধা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের দায়িত্ববোধ থেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। কিন্তু সেখানে তাদের প্রতি রাষ্ট্রের নির্লজ্জ অবহেলা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শান্তিপূর্ণভাবে উপস্থিত হওয়া এই দেশপ্রেমিক যোদ্ধাদের পুলিশ দিয়ে পেটানো হয়। আহত হন কেউ হাতহারা, কেউ পা-হারা, কেউবা চোখহারা সেসব যোদ্ধা, যারা একসময় জাতির জন্য নিজেদের শরীর উৎসর্গ করেছিলেন। অধ্যাপক বার্ণিক এই ঘটনাকে ‘পৈশাচিক’ উল্লেখ করে বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে ১৭ অক্টোবর জাতীয় জীবনে এক কলঙ্কময় অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে।

‘জুলাই সনদ’: রক্তমাখা প্রতীক:
যে ‘জুলাই সনদ’কে ঘিরে দেশের ইতিহাসে একটি নতুন মোড় ঘোরানোর সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিল, সেটি এখন অবিচার ও অবহেলার রক্তমাখা প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সনদের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি ড. মুহম্মদ ইউনুসও সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, জুলাইযোদ্ধাদের রক্ত ও আত্মত্যাগের ওপর দাঁড়িয়ে এই সনদে স্বাক্ষর করে তিনি নিজেকেও এই কলঙ্কের অংশীদার করেছেন।

জনগণের ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া:
সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, যে সনদ দেশের যোদ্ধাদের উপেক্ষা করে এবং তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মূল্যবোধকে পদদলিত করে, তা ‘টয়লেট পেপার’ ছাড়া আর কিছু নয়। তাদের মতে, এই সনদ কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে না, বরং আরও বিভেদ ও ক্ষোভের জন্ম দেবে।

ঐতিহাসিক কলঙ্ক:
অধ্যাপক এম এ বার্ণিক তার মন্তব্যের শেষ অংশে দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেছেন, ১৭ অক্টোবর ২০২৫ তারিখটি এখন আর কোনো আশার প্রতীক নয়। এটি এখন এক নির্মম সত্যের দিন, যেখানে জাতির প্রকৃত যোদ্ধারা নিগৃহীত এবং তাদের আত্মত্যাগকে পদদলিত করে একদল সুবিধাভোগী উৎসব করছে। ইতিহাস এই জঘন্য ঘটনাকে কখনোই ক্ষমা করবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। এই ঘটনা রাষ্ট্রের চরিত্র এবং দেশপ্রেমিক নাগরিকদের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গভীর প্রশ্ন তৈরি করেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button