দরুদ শরীফের দশ অলৌকিক ফজিলত: কোরআন-হাদিসের আলোকে বাস্তব দৃষ্টান্ত
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলাম ধর্মে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ একটি অত্যন্ত বরকতময় ইবাদত। দরুদের ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস ও বুজুর্গদের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণিত আছে। নিয়মিত দরুদ পাঠ ইহকাল ও পরকালের অসংখ্য কল্যাণের চাবিকাঠি। এখানে দরুদ শরীফ পাঠের এমন দশটি অলৌকিক ফজিলত তুলে ধরা হলো, যা বিভিন্ন ইসলামিক গ্রন্থে উল্লেখিত বাস্তব দৃষ্টান্ত দ্বারা প্রমাণিত।
১. কবরের আজাব থেকে মুক্তি:
ইমাম ইবনে কাইয়্যিম তার ‘কিতাবুর রুহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, এক আলেম স্বপ্নে দেখেন যে একটি কবর থেকে আজাবের ধ্বনি আসছে। তিনি কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দরুদ শরীফ পাঠ শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর স্বপ্নে ওই কবরের বাসিন্দা জানান, আলেম সাহেবের দরুদ পাঠের বরকতে তার আজাব বন্ধ হয়ে গেছে।
২. শয়তানের কুমন্ত্রণা ও দুঃস্বপ্ন থেকে সুরক্ষা:
মাজমাউয জাওয়াইদ (খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ১৬৮) অনুসারে, এক ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে ভীত থাকত। একজন আলেম তাকে ঘুমানোর পূর্বে ১০০ বার দরুদ শরীফ পাঠের পরামর্শ দেন। লোকটি এই আমল শুরু করার পর আর কখনো দুঃস্বপ্ন দেখেনি।
৩. হারানো জিনিস ফিরে পাওয়া:
‘ফাজায়েলে দরুদ’ (খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭৮) গ্রন্থে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি তার মূল্যবান বস্তু হারিয়ে ফেলে বহু খোঁজাখুঁজির পরও তা উদ্ধার করতে পারেনি। এক আলেমের পরামর্শে সে অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ শুরু করে। আশ্চর্যজনকভাবে কয়েকদিনের মধ্যেই সে তার হারানো জিনিসটি ফিরে পায়।
৪. ব্যবসায় বরকত লাভ:
‘আল-আম্বিয়া ওয়াল-কারামাত’ (খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৫৬) অনুযায়ী, এক দরিদ্র ব্যবসায়ীকে একজন পীর সাহেব প্রতিদিন ৩০০ বার দরুদ পাঠ এবং ব্যবসার সময়ও দরুদ জারি রাখার নির্দেশ দেন। লোকটি এই আমল করার পর কয়েক মাসের মধ্যে তার ব্যবসা এতটাই লাভজনক হয়ে ওঠে যে সে অসংখ্য গরিবকে সাহায্য করতে সক্ষম হয়।
৫. অপ্রত্যাশিত বিপদ থেকে পরিত্রাণ:
‘মিরাকুল মুহাম্মাদ’ (খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৫৭) থেকে জানা যায়, এক ব্যক্তি জাহাজে ভ্রমণকালে প্রচণ্ড ঝড়ের কবলে পড়ে। যখন জাহাজ ডুবতে শুরু করে, সে ভীত হয়ে দরুদ পাঠ শুরু করে। অলৌকিকভাবে একটি নৌকা এসে তাকে উদ্ধার করে। সেই নৌকার বুজুর্গ ব্যক্তি জানান যে তিনি স্বপ্নে দরুদ পাঠকারীকে উদ্ধারের নির্দেশ পেয়ে সেখানে এসেছেন।
৬. সন্তান লাভে সহায়তা:
‘শারহু শিফা’ (খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৮) তে বর্ণিত আছে, এক নিঃসন্তান দম্পতি এক আলেমের কাছে সন্তান লাভের জন্য পরামর্শ চায়। আলেম তাদের প্রতিদিন ১০০০ বার দরুদ শরীফ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করার নির্দেশ দেন। কয়েক মাস আমল করার পর আল্লাহ তাদের সন্তান দান করেন।
৭. আত্মার প্রশান্তি লাভ:
আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া (খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ২৯০) অনুযায়ী, এক যুবক প্রচণ্ড হতাশা ও অস্থিরতায় ভুগছিল। একজন পীর সাহেবের পরামর্শে সে প্রতিদিন ৫০০ বার দরুদ শরীফ পাঠ করা শুরু করে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সে জীবনে এক গভীর প্রশান্তি অনুভব করতে থাকে এবং তার সকল অস্থিরতা দূর হয়ে যায়।
৮. রিজিক বৃদ্ধি:
ইমাম ইবনে জাওযী তার ‘কিতাবুল আওরাদ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, এক দরিদ্র লোক নিয়মিত দরুদ শরীফ পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলে। কয়েক মাস পর, সে এমন একটি কাজ পায় যেখানে তার রিজিকে এতটাই বরকত হয় যে সে আর্থিক কষ্ট থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি লাভ করে।
৯. মৃত্যু সহজ হওয়া:
‘রুহুল বায়ান’ (খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৩৭৮) থেকে জানা যায়, এক আলেম মৃত্যুর আগে বলেন যে তিনি প্রতিদিন দরুদ পাঠ করতেন, তাই তার মৃত্যু সহজ হবে ইনশাআল্লাহ। সত্যিই, তিনি অত্যন্ত শান্তভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
১০. রাসূল (সা.)-কে স্বপ্নে দর্শন:
‘শারহু শিফা’ (খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৮০৪) অনুযায়ী, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে স্বপ্নে দেখার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে একজন আলেমের কাছে আসে। আলেম তাকে ৪০ দিন ধরে প্রতিদিন ১০০০ বার দরুদ শরীফ পাঠ করার নির্দেশ দেন। লোকটি এই আমল করার পর এক রাতে স্বপ্নে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে দেখতে পান।
উপসংহার:
উপরোক্ত দৃষ্টান্তগুলো প্রমাণ করে যে দরুদ শরীফ পাঠ কেবল একটি মৌখিক ইবাদত নয়, বরং এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বরকত, সুরক্ষা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির চাবিকাঠি। আমাদের সকলেরই উচিত নিয়মিত দরুদ পাঠের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং এর অফুরন্ত ফজিলত অর্জন করা।



