
ডেস্ক রিপোর্ট: অন্যের ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করে বিল উত্তোলন ও জামানতের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গাজীপুরে বিএনপি নেতা ও এলজিইডির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলীসহ তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রবিবার (১৯ অক্টোবর) গাজীপুর জেলা ও দায়রা জজ মমতাজ পারভীনের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক তা নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন – কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান খান লাভলু, এলজিইডির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী মুজিবুর রহমান এবং গোলাম মোস্তফা।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার খিলগাঁও ফুলবাড়ীয়ার বাসিন্দা, দুর্গাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও মেসার্স ধীমান কনস্ট্রাকশনের মালিক এম এ ওহাব খানের সঙ্গে এলজিইডির তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী মুজিবুর রহমানের পরিচয় হয়। কাজী মুজিবুর রহমান এলজিইডি কনসালটেন্ট হিসেবে কক্সবাজারে কর্মরত অবস্থায় ওহাব খানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ধীমান কনস্ট্রাকশনের লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার প্রায় ৪ কোটি ১০ লাখ ৫৩ হাজার ৬৩৮ টাকা বরাদ্দের একটি প্রকল্পের কাজ পায় এই প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের ১০ শতাংশ পারফরম্যান্স সিকিউরিটি বাবদ বাদী ৪১ লাখ ৫ হাজার ৩৬৩ টাকা পে অর্ডারের মাধ্যমে জমা দেন।
পরবর্তীতে, কাজের বিলের বিপরীতে বাদীর দেওয়া চেক ও পে অর্ডার ব্যবহার করে তিন দফায় মোট ১ কোটি ৪৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩১৫ টাকা উত্তোলন করা হয় মনিরুজ্জামান খান লাভলু, কাজী মুজিবুর রহমান এবং গোলাম মোস্তফার নামে। অথচ কাজের প্রকৃত অগ্রগতি ছিল মাত্র ১ কোটি ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৩১৫ টাকার। বাকি ৪০ লাখ টাকা ফেরত না দিয়ে আসামিরা কাজ বন্ধ করে দেন এবং বাদীকে হত্যার হুমকিও দেন।
এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বাদী এম এ ওহাব খান গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও হত্যার হুমকির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে নির্দেশ দেন।
২০২৪ সালের ৮ জুলাই তৎকালীন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শহীদুল ইসলাম মোল্লা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিরা চুক্তির চেয়ে বেশি অর্থ উত্তোলন করেছেন, যা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং বাদীকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আদালত গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের প্রতি সমন জারি করেন।
আসামিরা গত ১৭ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেলেও নির্ধারিত সময় শেষে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি। রবিবার (১৯ অক্টোবর) তিন আসামি গাজীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গাজীপুর আদালতের ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. হাফিজ উল্লাহ দর্জি জানান, রবিবার তিন আসামি আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত তাদের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।



