অপরাধএক্সক্লুসিভচট্টগ্রামচট্টগ্রাম বিভাগদুর্নীতিবাংলাদেশবিভাগ

চট্টগ্রামে কর দুর্নীতির ঝড়: দুই অভিযোগ সুমন মজুমদারের বিরুদ্ধে

মুহাম্মদ জুবাইর: চট্টগ্রাম করকর্মকর্তা সুমন মজুমদারের বিরুদ্ধে দুই অভিযোগ: কলকাতায় জমি-বাড়ি ক্রয় সুমন মজুমদারের বিরুদ্ধে ঘুষ-জালিয়াতির দুই অভিযোগ তদন্তের দাবিদুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ জমা দুটি অভিযোগপত্রে চট্টগ্রামের রাউজান সার্কেলের অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মোঃ সুমন মজুমদারের বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি নথি জালিয়াতি এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের এই অভিযোগগুলো রাজস্ব বিভাগের স্বচ্ছতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন তুলেছে।দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ (সংশোধিত ২০১৬) এবং দুদক (অভিযোগ দাখিল ও তদন্ত) বিধি, ২০০৭ অনুসারে দুটি অভিযোগপত্র জমা পড়েছে—একটি ২১ অক্টোবর এবং অন্যটি ২২ অক্টোবর তারিখে। উভয় অভিযোগেই সুমন মজুমদারের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেছেন এস.এম. আলা উদ্দিন (ঢাকার দক্ষিণ গোড়ান, খিলগাঁও) এবং আব্দুর রহিম (চট্টগ্রামের ডবলমুরিং)। অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, জনস্বার্থ রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।অভিযোগ অনুসারে, সুমন মজুমদারের কার্যকলাপ রাষ্ট্রীয় রাজস্বের ক্ষতি করছে লক্ষাধিক টাকার এবং করদাতাদের হয়রানি সৃষ্টি করছে। তারা দুদকের কাছে প্রাথমিক অনুসন্ধান এবং বিস্তারিত তদন্তের দাবি করেছেন। ২১ অক্টোবরের প্রথম অভিযোগে এস.এম. আলা উদ্দিন ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সরকারি নথি জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে, ২২ অক্টোবরের দ্বিতীয় অভিযোগে আব্দুর রহিম ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার, অবৈধ সম্পদ অর্জন, জনসেবায় গাফিলতি এবং অসদাচরণের অভিযোগ করেছেন।সুমন মজুমদার সার্কেল-৬১ (রাউজান), কর অঞ্চল-০৩, চট্টগ্রামে কর্মরত। অভিযোগ অনুসারে, তিনি কর নির্ধারণ, ফাইল অনুমোদন, নিরীক্ষা এবং রিফান্ড প্রক্রিয়ায় নিয়মিত অনিয়মে লিপ্ত ছিলেন। দুটি অভিযোগপত্রে তার বিরুদ্ধে যেসব গুরুত্বপূর্ণ অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে, তার মধ্যে প্রধান কয়েকটি হলো:প্রথমত, ঘুষ গ্রহণ ও অবৈধ আর্থিক লেনদেন। কর ফাইল নিষ্পত্তি, ছাড়পত্র প্রদান এবং নিরীক্ষার ক্ষেত্রে করদাতা ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ, বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে ঘুষ দাবি ও গ্রহণ করা হয়েছে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এই লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে বলে অভিযোগ। এর বিনিময়ে কর ফাঁকিদার প্রতিষ্ঠানের কর নির্ধারণ কমানো এবং অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে রিফান্ড অনুমোদন করা হয়েছে। ফলে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং সরকারি দপ্তরের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এই কার্যকলাপ দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ধারা ২(ঘ) ও ১৯(১) অনুসারে ঘুষ গ্রহণের অপরাধের অন্তর্ভুক্ত এবং দণ্ডনীয়।দ্বিতীয়ত, ক্ষমতার অপব্যবহার ও হয়রানি। অভিযুক্ত কর্মকর্তা তার পদমর্যাদার প্রভাব খাটিয়ে আইনসিদ্ধ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছেন। কর ফাঁকিদাতা প্রতিষ্ঠানের নথি বিলম্বিত করা, নিজের ইচ্ছানুসারে ছাড় প্রদান, তদন্তাধীন ফাইল গোপন বা স্থগিত রাখা এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ আছে। এছাড়া নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য সংযোজন, নোটিশ বিলম্বিতকরণ এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রদানের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে। এতে করদাতারা প্রশাসনিক হয়রানির শিকার হয়ে আর্থিক-মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এই কার্যকলাপ দুদক আইনের ধারা ২(ঘ) অনুসারে ক্ষমতার অপব্যবহারের অপরাধ হিসেবে গণ্য।তৃতীয়ত, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও গোপনীয়তা। অভিযোগকারীদের দাবি, সুমন মজুমদার সরকারি বেতন ও বৈধ আয়ের সীমা অতিক্রম করে বিপুল পরিমাণ অঘোষিত সম্পদ অর্জন করেছেন। তার নামে এবং স্ত্রী ও নিকট আত্মীয়দের নামে রাজধানী ও চট্টগ্রামে একাধিক ফ্ল্যাট, জমি, গাড়ি এবং ব্যাংক আমানত রয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি গোপনে ভারতের কলকাতায় একটি বাড়ি ও জমি ক্রয় করেছেন, যা তার বৈধ আয় দ্বারা সম্ভব নয়। এই সম্পদগুলো বার্ষিক সম্পদ বিবরণীতে উল্লেখ না করে মিথ্যা ও অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করা হয়েছে। এটি দুদক আইনের ধারা ২৬(২) ও ২৭ অনুসারে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও গোপনের অপরাধ।চতুর্থত, সরকারি নথি জালিয়াতি ও প্রতারণা। আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত নথিপত্র, কর ছাড়পত্র এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্ব সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করা হয়েছে। নথি বিকৃতি, রিপোর্টে পরিবর্তন, স্বাক্ষর জাল এবং অনুমোদনের সময় প্রতারণামূলক আচরণের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে। এই কার্যকলাপ দুদক আইনের ধারা ২(ঘ) এবং দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ধারা ৪২০, ৪৬৮ ও ৪৭১ অনুসারে প্রতারণা, জালিয়াতি ও সরকারি নথি বিকৃতির অপরাধের অন্তর্ভুক্ত।পঞ্চমত, জনস্বার্থবিরোধী আচরণ ও অবহেলা। অভিযোগকারীদের মতে, সুমন মজুমদার নিয়মিত অফিসে অনুপস্থিত থাকেন, আবেদন নিষ্পত্তিতে অযথা বিলম্ব ঘটান এবং করদাতাদের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এতে রাজস্ব বিভাগসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং রাষ্ট্রীয় নৈতিকতা ও জনআস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটি প্রশাসনিক আচরণবিধির লঙ্ঘন।অভিযোগগুলো দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ধারা ২(ঘ) (দুর্নীতির সংজ্ঞা), ১৭(ঘ) (কমিশনের অনুসন্ধান ক্ষমতা), ১৯ (ঘুষ গ্রহণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার) এবং ২৬ (অবৈধ সম্পদ অর্জন ও গোপন) এর আওতায় পড়ে। দুদক (অভিযোগ দাখিল ও তদন্ত) বিধি, ২০০৭-এর বিধি ৫ (অভিযোগ গ্রহণ) ও ৭ (প্রাথমিক অনুসন্ধান) অনুসারে তদন্তের বিধান রয়েছে।অভিযোগকারীরা বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন, উল্লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সুমন মজুমদারের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button