সিরাতাল মুস্তাকীম: দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার একমাত্র চাবিকাঠি

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: মুসলমান হিসেবে আমরা প্রতিদিন সালাতে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহর কাছে একটি সরল পথের সন্ধান করি, যখন বলি, “ইহ্দিনাস্ সিরাতাল মুস্তাকীম” – অর্থাৎ, “আমাদেরকে সরল পথ দেখান”। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এই ‘সরল পথ’ বা ‘দিনের পথ’ আসলে কী এবং এর গুরুত্ব কেন এত অপরিসীম? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা করা হলো।
১. দিনের পথ (সিরাতাল মুস্তাকীম) কী বোঝায়?
‘দিনের পথ’ বা ‘সিরাতাল মুস্তাকীম’ দ্বারা বোঝানো হয়েছে আল্লাহ তায়া’লার আনুগত্য ও সন্তুষ্টির দিকে পরিচালিত সেই পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, যা আল-কুরআন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্নাহ দ্বারা সুনির্দিষ্ট। এটি এমন একটি পথ যা মানুষকে শিরক, বিদ’আত এবং সকল প্রকার পাপকাজ থেকে বিরত রাখে।
কুরআনে এই পথের ভিত্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে: “তুমি বলো, ‘নিশ্চয় আমার প্রতিপালক আমাকে সরল পথ দেখিয়েছেন—এক সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্ম, যা ইব্রাহীমের সুদৃঢ় আদর্শের অনুগামী; আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।'” (সূরা আল-আন’আম, আয়াত: ১৬১)।
২. দিনের পথে চলার অপরিহার্যতা (আবশ্যকতা)
দিনের পথে চলার আবশ্যকতা মূলত দুটি মৌলিক কারণে নিহিত—দুনিয়ার মুক্তি ও আখিরাতের চিরন্তন সফলতা:
- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও ইবাদতের পূর্ণতা: আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্যই হলো আল্লাহর ইবাদত করা। এই সরল পথে চললেই কেবল তাঁর ইবাদত সঠিক ও ত্রুটিমুক্ত হয় এবং তিনিই সন্তুষ্ট হন। এই পথ ব্যতীত অন্য যেকোনো পথ আল্লাহর কাছে প্রত্যাখ্যাত।
- জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভ: সিরাতাল মুস্তাকীম হলো আখিরাতে জান্নাতে পৌঁছানোর একমাত্র সেতুবন্ধন। যে ব্যক্তি এই পথে অবিচল থাকবে, সে কিয়ামতের দিন পুলসিরাত সফলভাবে পার হয়ে আল্লাহর ক্ষমা ও জান্নাত লাভ করবে। এর বাইরে অন্য সকল পথ শয়তানের প্ররোচনায় সৃষ্টি এবং জাহান্নামের দিকে ধাবিত।
৩. এই পথের পথিক কারা? (আদর্শ অনুসরণ)
কুরআন স্পষ্টতই উল্লেখ করেছে যে, সরল পথে থাকা মানে সেই সফল ও আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত বান্দাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা, যাদের সম্পর্কে সূরা আল-ফাতিহায় বলা হয়েছে: “আমাদেরকে সরল পথ দেখান; তাদের পথ, যাদেরকে আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথ নয়, যাদের উপর আপনার ক্রোধ বর্ষিত হয়েছে, এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।” (সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৬-৭)।
আল্লাহ তায়া’লা নিজেই এদের ব্যাখ্যা করে বলেছেন: “আর যারা আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্য করবে, তারা তাদের সঙ্গী হবে যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন—অর্থাৎ নবী, সিদ্দীক (সত্যবাদী), শহীদ ও সৎকর্মশীলগণ। আর সঙ্গী হিসেবে তারা কতই না উত্তম!” (সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৬৯)।
৪. কিভাবে পথে অবিচল থাকা যাবে? (নির্দেশনা)
দিনের পথে অবিচল থাকতে হলে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুটি মূল ভিত্তিকে আঁকড়ে ধরতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “আমি তোমাদের মাঝে এমন দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা যতক্ষণ তা শক্তভাবে আঁকড়ে থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না: একটি হলো আল্লাহর কিতাব (কুরআন) আর অপরটি হলো তাঁর রাসূলের সুন্নাহ (আদর্শ)।” (সহীহ মুসলিমের বর্ণনা থেকে সংকলিত, যা রাসূলের বিদায় হজ্জের ভাষণের মূল সারমর্ম)।
আসুন, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে—পারিবারিক সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য, চলাফেরা ও ইবাদত—সবকিছুতেই আমরা কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনা মেনে চলি। কারণ এটিই একমাত্র পথ, যা দুনিয়ার শান্তি এবং আখিরাতে জান্নাতের নিশ্চয়তা দেয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সিরাতাল মুস্তাকীমে অবিচল থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।



