জুমু’আর দিনের ফজিলত ও বিশেষ মুহূর্ত: তূর পাহাড় থেকে মদিনা পর্যন্ত এক ব্যতিক্রমী সংবাদ যাত্রা
তূর, শুক্রবার: একদা হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) তূর পাহাড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন, যেখানে তাঁর সাক্ষাৎ হয় কা’ব (রাঃ)-এর সাথে। এই দুই মনীষী একদিন একত্রিত হয়ে হাদিস ও তাওরাতের জ্ঞান বিনিময়ে মগ্ন হন। এই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল জুমু’আর দিনের অপরিসীম ফজিলত এবং এর বিশেষ মুহূর্তের তাৎপর্য।
হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন: “সূর্য উদিত হওয়া দিনগুলোর মধ্যে জুমু’আর দিনই সর্বোৎকৃষ্ট।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এই পুণ্যময় দিনেই হযরত আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল, তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং পরবর্তীতে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। তাঁর তাওবা কবুল এবং ইন্তেকালও এই দিনেই হয়েছিল। কিয়ামতও এই জুমু’আর দিনেই সংঘটিত হবে।
হাদিসে আরও বলা হয়েছে, বনী আদম ব্যতীত ভূপৃষ্ঠের সকল জীবজন্তু জুমু’আর দিন সূর্যোদয় পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ভয়ে উৎকণ্ঠিত থাকে। এই দিনে এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি সালাতে রত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করলে, আল্লাহ তা কবুল করেন।
কা’ব (রাঃ) প্রথমে জিজ্ঞাসা করেন যে, এই বিশেষ মুহূর্তটি কি বছরে একবার আসে? উত্তরে হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) নিশ্চিত করেন যে, এটি প্রতি জুমু’আর দিনেই বিদ্যমান। কা’ব (রাঃ) তখন তাওরাত থেকে পাঠ করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
ভ্রমণের বিতর্ক ও আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-এর ব্যাখ্যা:
তূর থেকে ফেরার পথে হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে বসরা ইবনু আবূ বসরা গিফারী (রাঃ)-এর সাক্ষাৎ হয়। বসরা (রাঃ) জানান, তূরে যাওয়ার পূর্বে তাঁর সাথে দেখা হলে আবূ হুরায়রা (রাঃ) সেখানে যেতেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সেই হাদিসটি উল্লেখ করেন যেখানে বলা হয়েছে, তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও সওয়াবের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না: মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী এবং মসজিদে বায়তুল মুকাদ্দাস।
পরবর্তীতে হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-এর সাথে তূর পাহাড়ের অভিজ্ঞতা এবং কা’ব (রাঃ)-এর সাথে তাঁর আলোচনার বিবরণ দেন। তিনি জুমু’আর দিনের ফজিলত এবং বিশেষ মুহূর্তের কথা পুনরায় বর্ণনা করেন। কা’ব (রাঃ) প্রাথমিকভাবে সেই মুহূর্তটি বছরে একবার আসার কথা বললেও, তাওরাত পাঠের পর তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বক্তব্য সমর্থন করেন যে, তা প্রতি জুমু’আর দিনেই আসে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) তখন নিশ্চিত করেন যে, কা’ব (রাঃ) সত্য বলেছেন এবং তিনি নিজেও সেই বিশেষ মুহূর্ত সম্পর্কে অবগত আছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) যখন সেই মুহূর্তটি সম্পর্কে জানতে চান, তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বলেন, “তা জুমু’আর দিনে সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে শেষ সময়।”
এই ব্যাখ্যা শুনে আবূ হুরায়রা (রাঃ) প্রশ্ন তোলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তো বলেছেন, “কোনো মুমিন ব্যক্তি সালাতে রত থাকা অবস্থায় তা পায়,” অথচ সেই সময় তো কোনো সালাত আদায় করা হয় না। জবাবে আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আরেকটি হাদিস উল্লেখ করেন: “যে ব্যক্তি সালাত আদায় করে এবং বসে বসে পরবর্তী সালাতের অপেক্ষায় থাকে, সে ব্যক্তি সালাতেই থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার কাছে পরবর্তী সালাত উপস্থিত হয়।” তিনি বলেন, এই বিশেষ মুহূর্তটিও একই রকম।
এই ঘটনাটি জুমু’আর দিনের গুরুত্ব, সালাতের মাহাত্ম্য এবং মুসলিম মনীষীদের জ্ঞান অনুসন্ধানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।



