নড়াইলের মাউলীতে প্রবীণ দেলবার মোল্যাকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে গণজমায়েত: ন্যায়বিচারের দাবি

বিশেষ প্রতিনিধি, চৌধুরী জুয়েল রানা: নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মাউলী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেলবার মোল্যা (৮৫) কে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে এলাকাবাসী এক বিশাল মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর ২০২৫) বিকেলে চান্দেরচর বাজার মোড়ে এই প্রতিবাদী কর্মসূচিতে শত শত মানুষ অংশ নেন। হাতে ব্যানার ও স্লোগানে পুরো এলাকা মুখরিত ছিল, যেখানে বক্তারা হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।
“আমার বাবার হত্যার বিচার চাই” – নিহতের কন্যার আকুতি
মানববন্ধনে নিহতের কন্যা আন্না পারভীন আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “আমার বাবাকে বাড়ির সামনে থেকে রাতের অন্ধকারে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি কারও সঙ্গে শত্রুতা করতেন না, ছিলেন সবার প্রিয় মানুষ। অথচ হত্যাকাণ্ডের পরও অনেক অপরাধী এখনো ধরা পড়েনি। আমরা এখন দেখছি, কিছু মানুষ নিজেদের বাড়িতে নিজেরাই আগুন লাগিয়ে নাটক সাজাচ্ছে, যাতে সত্য আড়াল হয়। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি—আপনারা সত্য উদঘাটন করুন, প্রকৃত খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করুন, আর নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয়।”
বক্তারা দেলবার মোল্যাকে একজন সৎ, পরিশ্রমী ও নিরীহ মানুষ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তাঁকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা সমাজের মানবিক মূল্যবোধে গভীর আঘাত হেনেছে। হত্যাকাণ্ডের পর অনেক আসামি এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় এলাকায় গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
বক্তাদের ক্ষোভ ও দাবি
সমাজসেবক মোঃ ম.স. আব্দুল্লাহ বলেন, “দেলবার মোল্যা ছিলেন আমাদের এলাকার একজন আদর্শ মানুষ। তাঁকে যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রশাসনের কাছে আমরা জোর দাবি জানাই, এই হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক। আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ, কিন্তু বিচার না হলে আমরা চুপ থাকব না।”
স্থানীয় তরুণ নেতা রিপন শেখ বর্তমান পরিস্থিতি ঘোলাটে করার প্রচেষ্টার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, এখন এলাকায় কিছু দুষ্টচক্র নিজেদের স্বার্থে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। এমনকি এক শ্রেণির লোক নিজেদের বাড়িতে নিজেরাই আগুন ধরিয়ে দিয়ে এলাকায় অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। অথচ এই এলাকা সবসময় শান্তিপূর্ণ ছিল, মানুষ মিলেমিশে বসবাস করত। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাই, যারা এমন নাটক সাজিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হোক। কেউ যেন এই সুযোগে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করতে না পারে।”
ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব মাওলানা কারিমুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, “ইসলাম শান্তির ধর্ম। অন্যায় বা অন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেওয়া—দুটোই বড় পাপ। দেলবার মোল্যার হত্যার মাধ্যমে শুধু একজন মানুষকেই হত্যা করা হয়নি, সমাজের ন্যায়বোধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন আবার কেউ নিজের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছে, যা আরও নিন্দনীয়। আমরা চাই, প্রশাসন সত্য উদঘাটন করে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনে এবং নিরপরাধ মানুষকে রক্ষা করে।”
বক্তারা আরও强调 করেন যে, দেলবার মোল্যার হত্যার ন্যায়বিচার দ্রুত নিশ্চিত করা উচিত এবং এলাকায় শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখতে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
মানববন্ধনের শেষে বক্তারা নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে অঙ্গীকার করেন যে, এই ঘটনার ন্যায়বিচার না হওয়া পর্যন্ত এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
ঘটনার প্রেক্ষাপট:
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট (সোমবার) রাত ৮টার দিকে চান্দেরচর বাজার থেকে অর্ধ কিলোমিটার পশ্চিমে রাস্তার পাশে ইসমাইল মোল্যার স্ত্রী খাদিজাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে দেলবার মোল্যা গুরুতর আহত হন। প্রাথমিকভাবে চান্দেরচর বাজারে চিকিৎসা গ্রহণের পর তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।



