আল্লাহ্র একত্ববাদ ও পার্থিব জীবনের উদ্দেশ্য

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: পবিত্র কুরআনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূরা, আল-কাহাফ-এর কয়েকটি আয়াত গভীরভাবে মানবজাতিকে এক বিশেষ বার্তা প্রদান করে। এই আয়াতগুলোতে সৃষ্টিকর্তার একত্ববাদ, তাঁর প্রতি আরোপিত মিথ্যা অপবাদ এবং পার্থিব জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে অত্যন্ত জোরালোভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।
এই ঐশী বাণীতে সর্বপ্রথম কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে সেইসব ব্যক্তিকে, যারা মহান আল্লাহর ওপর ‘সন্তান গ্রহণ’ করার মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করে। এই আয়াত পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করে যে, এমন গুরুতর দাবি উত্থাপনকারীদের কাছে এই বিষয়ে কোনো প্রকার প্রামাণিক জ্ঞান নেই, এমনকি তাদের পূর্বপুরুষদের কাছেও ছিল না। তাদের মুখ থেকে উচ্চারিত এই কথা অত্যন্ত জঘন্য ও সাংঘাতিক। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ সম্পর্কে তারা যা বলে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ঐশী সতর্কবাণী মূলত সৃষ্টিকর্তার একক সত্তা ও তাঁর পবিত্রতা রক্ষায় এক অদম্য আহ্বান।
পরবর্তী আয়াতে সেইসব মানুষের প্রতি মনোনিবেশ করা হয়েছে যারা এই পবিত্র গ্রন্থ—অর্থাৎ কুরআন—এর বার্তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। এর ফলস্বরূপ, আল্লাহ্র পক্ষ থেকে রাসূল (সা.)-কে এক প্রকার সান্ত্বনা দেওয়া হয়েছে। আয়াতে বলা হয়েছে, এই বাণী অস্বীকারকারীদের দুঃখ ও কষ্টে সম্ভবত আপনি আপনার আত্মাকে বিনাশ করে দিতে চাইছেন। এই প্রবোধের মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় নবীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, সত্যকে পৌঁছানোই তাঁর কাজ, কিন্তু এর ওপর জোরপূর্বক কাউকে বিশ্বাস করানো তাঁর দায়িত্ব নয়। এটি যেন এক ঐশী আশ্বাস, যা মানসিক কষ্টের উপশম করে।
সবশেষে, এই আয়াত মানব জীবনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য সম্পর্কে এক মৌলিক সত্য তুলে ধরে। আল্লাহ্ ঘোষণা করছেন যে, ভূমণ্ডলের উপর যা কিছু আছে, সেসবকে আমি পৃথিবীর জন্য সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছি। এই পৃথিবীর সকল চাকচিক্য, সম্পদ ও আকর্ষণ নিছক শোভা মাত্র। আর এই শোভা সৃষ্টির মূল কারণ হলো মানবজাতিকে পরীক্ষা করা—যাতে দেখা যায় যে, ‘আমলের’ (কর্মের) দিক থেকে তাদের মধ্যে কে সর্বোত্তম। অর্থাৎ, পার্থিব জীবনের সমস্ত আয়োজন কোনো ভোগের উদ্দেশ্যে নয়, বরং এটি একটি বিশাল পরীক্ষা ক্ষেত্র। এখানে মানুষের কার্যকলাপই হবে তাদের সফলতার একমাত্র মাপকাঠি।
সারকথা, সূরা আল-কাহাফের এই অংশটি একাধারে আল্লাহ্র একত্বের ঘোষণা, মিথ্যাচারের প্রতি হুঁশিয়ারি এবং জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটি মৌলিক ধারণার ভিত্তি স্থাপন করে।



