নিখোঁজ সাংবাদিক দিদারকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার
অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ থাকার পর অবশেষে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হলেন কুমিল্লার হোমনার সাংবাদিক দিদার আহমেদ। গত ২২ অক্টোবর ব্যবসার কাজে ঢাকা যাওয়ার পথে নিখোঁজ হওয়া এই সাংবাদিককে গতকাল সোমবার (২৬ অক্টোবর) চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার এক নির্জন জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়রা তাকে অচেতন অবস্থায় একটি পুকুরপাড়ে পড়ে থাকতে দেখে হাইওয়ে ও থানা পুলিশের সহায়তায় দ্রুত মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লার হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থানান্তর করা হয়, যেখানে তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
উদ্ধারের পর দিদারের কাছে থাকা দৈনিক ‘এই আমার দেশ’ পত্রিকার কার্ডটি সূত্র হিসেবে কাজ করে। পুলিশ দ্রুত পত্রিকা অফিসে যোগাযোগ করলে নির্বাহী সম্পাদক এম. হোসাইন আহমেদ ঢাকা অফিস থেকে যোগাযোগ করে দিদারের পরিবারকে খবর দেন। নির্বাহী সম্পাদক নিজেও মিরসরাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাঁর পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা দেন। পরবর্তীতে প্রতিবেদক ‘হোমনার আলো’ ও হোমনা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল সাহেবের সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত নিশ্চিত হন। তার বিচক্ষণতার জন্যই পরিবার দিদারকে জীবিত ফেরত পেয়েছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে।
হোমনার দুলালপুর ইউনিয়নের বড় ঘাগুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা দিদার আহমেদ ‘হোমনার আলো’র স্টাফ রিপোর্টার এবং ‘এই আমার দেশ’ পত্রিকার হোমনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তিনি হোমনা থানা প্রেসক্লাবের সদস্য এবং পৌর সুপার মার্কেটে তার একটি কসমেটিকসের দোকানও রয়েছে।
গত ২২ অক্টোবর তিনি ব্যবসার কাজে ঢাকার উদ্দেশে বের হয়ে নিখোঁজ হন। সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজির পর তার মা বিলকিস বেগম শনিবার (২৫ অক্টোবর) হোমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
চিকিৎসাধীন দিদার আহমেদ জানান, ঘটনার দিন সকালে তিনি অটোরিকশায় বাসস্ট্যান্ডে যান এবং কুমিল্লাগামী বাসে ওঠেন। পথে বাতাকান্দিতে নেমে রাস্তার পশ্চিম পাশের একটি দোকানে নাস্তা করেন। নাস্তা সেরে রাস্তায় ওঠার পরই কী হয়েছিল, তা তিনি মনে করতে পারছেন না। এর কয়েকদিন পর মিরসরাইয়ের এক জঙ্গল থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় স্থানীয়দের মাধ্যমে তিনি উদ্ধার হন।
সাংবাদিক দিদার ধারণা করছেন, সম্প্রতি এলাকার একটি আপত্তিকর ঘটনার সংবাদ প্রকাশের জেরেই তিনি অপহরণের শিকার হয়েছেন। ওই সংবাদের কারণে ক্ষুব্ধ পক্ষ তাকে মিথ্যা মামলা ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিল। এ সংক্রান্ত ঘটনায় তিনি আগেও থানায় একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেছিলেন বলে জানা যায়। তার পরিবারও মনে করছে, পূর্ব-শত্রুতার জেরেই তাকে অপহরণ করা হয়েছে।
হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, দিদারকে জীবিত উদ্ধার করা স্বস্তির বিষয়। ঘটনার পেছনের রহস্য উদঘাটনে পুলিশ জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে।
এদিকে, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আজিজুর রহমান মোল্লা হাসপাতালে গিয়ে দিদারের খোঁজ নেন এবং তাঁর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। একইসঙ্গে তিনি দেশে সাংবাদিকতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এই ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সাংবাদিক দিদারের ওপর এমন বর্বরতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। তারা মত প্রকাশ করেন, সত্য অনুসন্ধানে ব্রতী কলমকর্মীরা কখনোই অপরাধীদের শত্রুতা পাওয়ার যোগ্য নন।



