ইসলাম ধর্ম

সমাজে প্রচলিত ২০টি ‘বিদআত’, যা সুন্নাহ নয়

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ধর্মীয় অনুশাসন পালনে অনেক সময় সমাজে এমন কিছু কাজ প্রচলিত হয়ে যায়, যা মানুষ সুন্নাত বা ইসলামের অংশ মনে করে নিষ্ঠার সাথে পালন করে। কিন্তু ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে এগুলো হলো ‘বিদআত’ বা নব-উদ্ভাবিত প্রথা, যার কোনো ভিত্তি নেই। এ ধরনের বিদআতমূলক কাজগুলো থেকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা অত্যন্ত জরুরি।

আলোচ্য কলামে সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত এমন ২০টি বিদআতের একটি তালিকা তুলে ধরা হলো, যা ইসলামের মৌলিক শিক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়:

সামাজিক ও পারিবারিক প্রথা:
১. হিলা বিয়ে: সমাজে প্রচলিত ‘হিলা বিয়ে’ বা হালাল করার উদ্দেশ্যে সাময়িক বিয়েকে ইসলামে বৈধ মনে করা হয় না।
২. বিবাহ বার্ষিকী (Marriage Anniversary) পালন: এটি ইসলামী সংস্কৃতি বা শরীয়তের কোনো অংশ নয়।
৩. কদমবুসি: কারো পা স্পর্শ করে বা পা ছুঁয়ে সালাম করা বা গায়ের সাথে পা লাগলে কদমবুসি করার রেওয়াজ। এটি আত্মীয়স্বজন বা গুণীজনদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাস:
৪. দাঁড়ি-পাল্লার প্রতি সালাম: দাঁড়িপাল্লা বা মাপার জিনিস হাত থেকে পড়ে গেলে বা পায়ে লাগলে সেটিকে সালাম করা এবং এই বিশ্বাস পোষণ করা যে এটি না করলে ‘লক্ষ্মী’ (ভাগ্য) চলে যাবে।
৫. আরবি লেখার প্রতি অতিরিক্ত সম্মান: রাস্তা-ঘাটে কোনো আরবি লেখা কাগজ (তা আরবি পত্রিকা বা অন্য কিছুই হোক) পেলে তা উঠিয়ে চুমু খাওয়া বা সালাম করা।
৬. কিতাবকে সালাম: কুরআন হাতে নিয়ে বা তিলাওয়াত করে নিয়ম করে তাকে সালাম করা অথবা বই হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেলে তা উঠিয়ে সালাম করা এবং মনে করা যে তা না করলে পড়ালেখা হবে না।
৭. তসবীহ দানা মুখে চুমু: তসবীহ পড়ার পর তসবীহ দানা মুখে চুমু খেয়ে সালাম করার রেওয়াজ।
৮. স্বপ্নের ফয়সালা মেনে নেওয়া: ব্যক্তিগত বা সামাজিক কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য স্বপ্নের ওপর নির্ভর করা।
৯. গ্রামের কবরে আযাব বন্ধের বিশ্বাস: এই ধারণা পোষণ করা যে, যে গ্রাম দিয়ে একজন আলেম হেঁটে যাবেন, সেই গ্রামের কবরে ৪০ দিন পর্যন্ত আযাব হবে না।

ইবাদত ও ধর্মীয় রীতির ক্ষেত্রে ভুল ধারণা:
১০. রমাদানের ২৭তম রাতকে নির্দিষ্ট করা: রমাদানের ২৭ তারিখের রাতকে নির্দিষ্টভাবে লাইলাতুল কদরের রাত মনে করা এবং শুধু এই রাতেই ওমরাহ পালনে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া।
১১. লবণ দিয়ে খাওয়া শুরু করাকে সুন্নাত মনে করা: খাওয়ার শুরুতে লবণ দিয়ে খাওয়া আরম্ভ করাকে নির্দিষ্ট কোনো সুন্নাত মনে করা।
১২. সেহরি/ইফতারের জন্য ডাকা ও চাঁদা: সাইরেন, ঢোল বা মুখের সুরে সেহরি বা ইফতারের জন্য ডাকা ও এটিকে সওয়াবের কাজ মনে করা, এবং এর জন্য চাঁদা সংগ্রহ করা।
১৩. তসবীহ ব্যবহার: সর্বদা সওয়াবের উদ্দেশ্যে বা লোক দেখানোর জন্য হাতে তসবীহ রাখা বা ব্যবহার করা।
১৪. সংখ্যাগত রূপান্তর (786): আল্লাহর নাম বা কুরআনের কোনো আয়াতকে অংকে (‘৭৮৬’ বা ‘786’) রূপান্তর করে ব্যবহার করা।

রাজনৈতিক ও শোকের প্রথা:
১৫. মহররমের তাজিয়া মিছিল ও মাতম: মহররম মাসের নামে তাজিয়া মিছিল বের করা এবং বুক চাপড়ে মাতম করা ইত্যাদি।
১৬. কবরকে ‘মাযার’ বলা: সাধারণ কবরকে ‘মাযার’ নামে অভিহিত করা, যেমন— ‘পাগলা বাবার মাযার’, ‘লেংটা বাবার মাযার’ ইত্যাদি।

সালাত ও ব্যক্তিগত আচার:
১৭. মুসাফার পর বুকে হাত: মুসাফা (হ্যান্ডশেক) করার পর হাত বুকে লাগানো।
১৮. একসাথে তিন তালাক: একসাথে বা এক বৈঠকে তিন তালাক দেওয়া।

এই ধরনের প্রথাগুলো ধর্মীয় জীবনে মিশ্রণ ঘটিয়ে ইবাদতের মূল কাঠামোকে দুর্বল করে দেয়। উলামায়ে কেরাম সর্বদাই এই ধরনের বিদআত থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন।

মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সকল প্রকার শিরক ও বিদআতমূলক কার্যকলাপ থেকে হেফাযত করুন। (আমীন)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button