ইসলাম ধর্ম

কঠিন সময়ে মানসিক প্রশান্তি: কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে ৭টি সহজ আমল

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: জীবনে চলার পথে মানুষ নানা ধরনের কঠিন পরিস্থিতি ও মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়। এসব প্রতিকূলতায় হতাশ না হয়ে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রেখে কিছু সহজ আমল পালন করলে মানসিক প্রশান্তি লাভ করা সম্ভব। কোরআন ও হাদিসের আলোকে এমন সাতটি গুরুত্বপূর্ণ আমল নিচে তুলে ধরা হলো, যা দুঃসময়ে পাথেয় হতে পারে।

১. অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসা
নিজের পেরেশানি দূর করার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায় হলো অন্যের কষ্ট লাঘবে এগিয়ে আসা। কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেওয়া, ঋণগ্রস্তকে ঋণের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া বা গৃহকর্মীর কাজে সামান্য সহায়তা করার মতো ছোট ছোট কাজও আল্লাহর কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয়। হাদিসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি অন্যের জন্য সহজ করে, আল্লাহ তার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে সহজ করে দেন।

২. কোরআন তিলাওয়াত ও অনুধাবন
কঠিন সময়ে অর্থ বুঝে কোরআন পাঠ এবং এর আয়াত নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে অভূতপূর্ব মানসিক শান্তি পাওয়া যায়। অনেক সময় মনে হবে, আল্লাহ যেন সরাসরি আপনার সঙ্গেই কথা বলছেন এবং আপনাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। বিশেষ করে, সূরা আদ-দুহা, আল-আম্বিয়া, ইউসুফ, আদ-দাহর এবং আল-বাকারার মতো সূরাগুলো পাঠে বিশেষভাবে উপকৃত হওয়া যায়।

৩. অপরের জন্য দোয়া করা
যখনই কোনো বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির কথা মনে হবে বা শুনবেন, তাৎক্ষণিকভাবে তার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। এই আমলের ফজিলত এতটাই বেশি যে, ফেরেশতারা দোয়াকারীর জন্য একই দোয়া করেন। যেহেতু ফেরেশতারা নিষ্পাপ, তাই তাদের দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

৪. ধৈর্যধারণ ও আল্লাহর প্রশংসা
বিপদের সময় আল্লাহর প্রতি কোনো প্রকার অভিযোগ (“কেন এমন হলো?”, “আর কত দোয়া করব?”) না করে ধৈর্যধারণ করা এবং সর্বাবস্থায় তাঁর প্রশংসা করা উত্তম। হযরত আইয়ূব (আঃ) বহু বছর কঠিন রোগে আক্রান্ত ছিলেন এবং তার সম্পদ ও সন্তান সবকিছু হারানোর পরেও কখনো অভিযোগ করেননি। তার ধৈর্য ও প্রশংসাপূর্ণ দোয়ার কারণেই আল্লাহ তাকে নিরাময় দান করেন।

৫. দুঃখ-কষ্ট প্রচারে সংযম
নিজের দুঃখ বা কষ্টের কথা সবার কাছে প্রচার করা থেকে বিরত থাকা নবী-রাসূলদের একটি আদর্শ ছিল। হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে তার ভাইয়েরা চুরির মতো জঘন্য অপবাদ দিলেও তিনি তা গোপন রেখেছিলেন। একইভাবে, হযরত মারয়াম (আঃ) যখন কুমারী অবস্থায় সন্তান জন্ম দেন, তখন মানুষের কটূক্তি থেকে বাঁচতে আল্লাহর হুকুমে নীরবতা পালন করেছিলেন। এই আদর্শ অনুসরণ করলে আল্লাহ কঠিন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন।

৬. আল্লাহর কাছে মন খুলে বলা
মানুষের কাছে নিজের কষ্টের কথা বারবার বলার পরিবর্তে জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে মন খুলে সবকিছু বলা উচিত। এতে মন হালকা হয় এবং অন্যের কাছে বলার প্রয়োজন অনুভব হয় না। হযরত ইয়াকুব (আঃ) পুত্রকে হারিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন, কিন্তু তিনি বলতেন, “আমি আমার দুঃখ ও কষ্টের কথা কেবল আল্লাহর কাছেই বলি।”

৭. শেষ রাতের দোয়া ও তাহাজ্জুদ
রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া কবুলের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। হাদিস অনুযায়ী, এই সময়ে আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দাদের ডেকে বলেন, “কে আছো আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দেবো?” এই মূল্যবান সময়কে কাজে লাগিয়ে দোয়া ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা এবং নিজের প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রার্থনা করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button