বহুল আলোচিত সাজ্জাদ হত্যার দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

মুহাম্মদ জুবাইর: চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ায় যুবদল নেতা মো. সাজ্জাদ (২২) হত্যা মামলায় পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে বিদেশি পিস্তল সহ আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অত্র সন্ত্রাসীরা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত এবং অস্ত্র চালিয়ে খুনে অংশ নেওয়া প্রধান আসামি ইউসুফ প্রকাশ হিরন (২৫) ও আরেক এজাহারনামীয় আসামি রিয়াজ করিম (৩৩) গ্রেফতার।
বুধবার (৩০ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে চান্দগাঁও থানাধীন মীর বাড়ি এলাকা থেকে ইউসুফ প্রকাশ হিরনকে গ্রেপ্তার করে বাকলিয়া থানা পুলিশ।
পরে তার স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে ভোর ৪টা ৪৫ মিনিটের সময় বাকলিয়া থানাধীন সুরভী আবাসিক এলাকার খালপাড়ে অবস্থিত ‘এসবিএন এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি নির্মাণ সামগ্রীর অফিস থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত স্পেনের তৈরি একটি বিদেশি পিস্তল, একটি গুলি ও একটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।

পৃথক আরেকটি অভিযানে মৃত আনু মিয়ার পুত্র, এজাহারনামীয় ১০ নম্বর আসামি রিয়াজ করিম (৩৩) কে পটিয়া থানাধীন জঙ্গলখাইন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।বাকলিয়া থানার ওসি তদন্ত মোজাম্মেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সাজ্জাদ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া ইউসুফ প্রকাশ হিরনের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তার দেখানো মতে হত্যায় ব্যবহৃত বিদেশি অস্ত্রটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে পুলিশের।
আরও জানা যায়, কোতোয়ালী জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আলমগীর হোসেনের সার্বিক দিকনির্দেশনা ও বাকলিয়া থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে অংশ নেন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক, এসআই আফতাব হোসেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কিশোর মজুমদার, এসআই আবদুল মোমিন, মোবারক হোসেন, ফরহাদ মহিম, আব্দুল কাদের, শরীফ উল্লাহ, মিজানুর রহমান, এএসআই জহিরুল ইসলাম, নূরে আলম, সাইফুল আলম ও সফিকুল ইসলাম।
এর আগে বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাতভর অভিযানে এজাহারনামীয় ৬ জনসহ মোট ৮ আসামিকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) ও বাকলিয়া থানা পুলিশ। এদের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ এবং বাকি চারজনকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—সবুজ ইসলাম মিরাজ (২৪), সাইদুল ইসলাম (২০), এমরান হোসেন সাগর (৩০), জিহান (২৩), আমজিদুল ইসলাম সাজু (৪৭), মোহাম্মদ আরাফাত (২২), মো. ওসমান (২৮) এবং দিদারুল আলম চৌধুরী রাসেল (৪২)। এ নিয়ে সাজ্জাদ হত্যা মামলায় মোট ১০ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, “নিহত সাজ্জাদের বাবা মো. আলম বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪৫ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। মামলার পর থেকেই থানা পুলিশ ও মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) যৌথভাবে অভিযান চালাচ্ছে। এ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িতদের গ্রেপ্তার করা এবং হত্যায় ব্যবহৃত বিদেশি পিস্তল উদ্ধারে আমরা সফল হয়েছি।তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করছে। পুলিশের এ দ্রুত অভিযানেই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উন্মোচিত হয়েছে।
মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাকলিয়া থানার এক্সেস রোড সংলগ্ন মদিনা আবাসিক এলাকার সামনে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ব্যানার টানানোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে একদল সশস্ত্র যুবক গুলি চালালে স্থানীয় ছাত্রদদ কর্মী মো. সাজ্জাদ (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুলিতে আহত হন আরও অন্তত ১৫ জন।এ ঘটনায় নিহতের বাবা মো. আলম (৫৭) বাদী হয়ে বাকলিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৩০)।
অভিযান-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয়রা জানান, পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপে এলাকায় স্বস্তি ফিরেছে। ঘটনার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই একের পর এক অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ যে দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে, তা প্রশংসার যোগ্য।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এই মামলায় পুলিশের ধারাবাহিক তদন্ত ও প্রযুক্তিনির্ভর অভিযানের ফলে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের মূল পরিকল্পনাকারী ও অস্ত্রধারীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।



