অপরাধএক্সক্লুসিভপ্রতারনাপ্রশাসনবাংলাদেশসম্পাদকীয়

ভুয়া সাংবাদিক, ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে টঙ্গীতে চাঁদাবাজি: ‘সালাম গং’ গ্রেফতার, অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা


হাবিব সরকার স্বাধীন, টঙ্গী (গাজীপুর): রাজধানীর উপকণ্ঠ টঙ্গী বাজার এলাকায় ভুয়া সাংবাদিক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মানবাধিকার কর্মীর পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণার অভিযোগে আব্দুল সালামের নেতৃত্বাধীন একটি সংঘবদ্ধ চক্রকে (সালাম গং) সম্প্রতি আটক করে গণধোলাই দিয়েছে জনতা। পরে তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। চক্রটির দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ ছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, এই চক্রটি বিভিন্ন সময় নিজেদের ‘জনতার ক্রাইম’ নামক পত্রিকার সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী কিংবা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করত। জানা যায়, এই চক্রের সদস্যরা দিনভর প্রতারণা, চাঁদাবাজি ও ‘ফিটিং বাণিজ্যের’ মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিত।

তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। অভিযোগকারী ও স্থানীয়দের মতে, এই চক্রের সদস্যরা মূলত জমির দালাল, কেয়ারটেকার, আদম ব্যবসায়ী, ডাব বিক্রেতা, মাছ ব্যবসায়ী, হকার এবং রিকশা চালকের মতো বিভিন্ন পেশার মানুষ। স্থানীয়রা জানায়, অশিক্ষিত ও অদক্ষ এই সিন্ডিকেট মাফিয়াদের গডফাদার হিসেবে পরিচিত আব্দুল সালামের নেতৃত্বেই এই অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।

টঙ্গী নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দারা ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়দানকারী সালাম গং-এর গ্রেফতারে আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, সালাম অত্যন্ত বদমেজাজি এবং সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানো, ব্ল্যাকমেল ও ইজ্জতহানিই তাদের মূল লক্ষ্য। তাদের চাঁদাবাজির প্রধান হাতিয়ার হলো দামি ক্যামেরা ব্যবহার করে অপেশাদারিত্বের প্রচার।

আব্দুল সালামের নেতৃত্বাধীন এই চক্রের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। জানা যায়:

১. ক্যান্টনমেন্ট সার্কেলে আটক: কিছুদিন আগে (২৫/৬/২৫ তারিখে) এই চক্রটি ক্যান্টনমেন্ট সার্কেলে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আটক হয়েছিল। পরে তারা ক্যান্টনমেন্ট সার্কেলের সাবেক এসিল্যান্ড বাসিত সাত্তারের কাছে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দিয়ে রক্ষা পান।
২. আফজাল বেকারিতে গণধোলাই: ২৪/৮/১১ তারিখে নতুন বাজার মোড়ের আফজাল বেকারি থেকেও চাঁদাবাজি করতে গিয়ে যুবদল নেতা ও স্থানীয় সাধারণ মানুষের হাতে আটক হন সালাম গং। সেখানেও তাদের গণধোলাই দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।
৩. থানায় তদবির বাণিজ্য: স্থানীয়দের দাবি, নতুন বাজার বাটারার থানাকে আতঙ্কের কেন্দ্র বানিয়ে ফেলেছেন সালাম। তিনি সারাদিন থানায় বসে বিভিন্ন ‘তদবির বাণিজ্য’ পরিচালনা করে থাকেন।

অভিযোগ রয়েছে, কুলাঙ্গার আব্দুল সালাম খিলক্ষেত প্রেসক্লাবের সভাপতিকে মোবাইল ফোনে হুমকি দেন। তিনি সভাপতির কাছে দুইটি দোকান দাবি করেন এবং তা না দিলে প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর হুমকি দেন। সভাপতি বিষয়টি বাজার কমিটির এখতিয়ারভুক্ত বলে জানালে সালাম তার কথিত মাছ ব্যবসায়ী ও মূর্খতার পরিচয় দিয়ে প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অপপ্রচার শুরু করেন। এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে থানায় জিডি (নম্বর ৩৩) দায়ের করা হয়।

এছাড়া, সালামের সংগঠনের আরেক চাঁদাবাজ খিলক্ষেতের বড়ুয়ায় প্রেসক্লাবের পরিচয় দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। খিলক্ষেত মা বেকারিতে চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে এবং একপর্যায়ে গণধোলাইয়ের শিকার হন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাদের দাবি, এই কুলাঙ্গার ও কথিত ভুয়া চক্রকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে সাংবাদিকতা পেশা ও সমাজকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button