যানবাহন সংকট: সিদ্ধিরগঞ্জে ব্যাহত পুলিশি সেবা
ভাড়া করা গাড়িতে টহল, বাড়ছে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল সিদ্ধিরগঞ্জে তীব্র যানবাহন সংকটের কারণে থানার পুলিশি সেবা কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ির অভাবে টহল ও জরুরি অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না, যার ফলে সমগ্র থানা এলাকায় মাদক ব্যবসা, চুরি, ছিনতাই এবং কিশোর গ্যাং-এর তৎপরতাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় পুলিশ সদস্যরা নিয়মিত টহল দিতে পারছেন না। ফলে জননিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। জরুরি পরিস্থিতিতে সময়মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় অপরাধীরা সহজেই পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এই সংকট মোকাবেলায় পুলিশ সদস্যরা বর্তমানে ভাড়া করা লেগুনা, ইজিবাইক এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা ব্যবহার করে টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এটি কেবল ঝুঁকিপূর্ণই নয়, বরং বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তির জন্যও অবমাননাকর বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ শাহীনূর আলম সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, “জনগণের সেবা নিশ্চিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যানবাহনের স্বল্পতার কারণে আমাদের লেগুনা ও সিএনজির মতো ভাড়া করা গাড়ি দিয়ে টহল দিতে হচ্ছে। তবে দ্রুত নতুন গাড়ি বরাদ্দ পেলে আমাদের কার্যক্রমের গতি ও দক্ষতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।”
তিনি আরও বলেন, “সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে একাধিক অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের কোনো প্রকার ছাড় না দিয়ে অতি শিগগিরই আইনের আওতায় আনা হবে।”
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গত বছরের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় দেশব্যাপী পুলিশের প্রায় দুই হাজারের বেশি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। এর মধ্যে সামান্য কিছু যানবাহন মেরামত করা গেলেও বেশিরভাগই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এই সংকটের প্রভাব পড়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাতেও, যেখানে মোটরসাইকেল ও পিকআপ ভ্যানের অভাব টহল কার্যক্রমকে সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত করছে।
এলাকার সচেতন নাগরিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বিপদে পড়লে আমরা পুলিশকে ফোন দিই। কিন্তু গাড়ি না থাকার কারণে পুলিশ যদি সময়মতো আসতে না পারে, ততক্ষণে অপরাধী পালিয়ে যায়। এতে অপরাধ দমন প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।”
এই পরিস্থিতিতে, সিদ্ধিরগঞ্জবাসী অবিলম্বে থানায় পর্যাপ্ত যানবাহন বরাদ্দ এবং মাদকসহ সকল অপরাধ দমনে বিশেষ অভিযান পরিচালনার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং র্যাব-১১ সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তাদের আশঙ্কা, দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অত্র এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।



