ইসলাম ধর্ম

রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তা: শয়তানের প্ররোচনা ও হেদায়েতের পথ

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: মানুষ যখন হেদায়েত ও সঠিক পথ থেকে দূরে সরে যায়, তখন শয়তানের ওয়াসওয়াসাকেই নিজের ভাবনা বলে ধরে নেয়। এর ফলে যে বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি টেনশন বা দুশ্চিন্তা করে, তা হলো রিজিক। রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তা মানুষের ঈমানকে দুর্বল করে দেয় এবং শয়তানকে তার ওপর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দেয়।

রিজিক নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা শুরু হলে শয়তান ব্যক্তিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। এর ফলে নামাজে মনোযোগ নষ্ট হয়, জিকির ও অন্যান্য আমল থেকে মন দূরে থাকে। আমল করতে চাইলেও মনোযোগ আসে না। ঘুম কমে যায় এবং জীবন অসহনীয় হয়ে ওঠে।

অথচ মানুষের রিজিক তার মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ কর্তৃক বরাদ্দকৃত। কেউ অন্যের কাছে হাত না পাতলেও তার নির্ধারিত রিজিক অবশ্যই পাবে। হাত পেতে মানুষ যে রিজিক লাভ করে, সেটাও তার নির্ধারিত রিজিক, কিন্তু সেটা সে পায় অসম্মানের সাথে। আর সেই রিজিকে আল্লাহর উপর ভরসা কম থাকে।

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে, রিজিক নিয়ে টেনশন করা আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসার পরিপন্থী। এই কারণে রিজিক নিয়ে দুশ্চিন্তা করাকে এক প্রকার কুফরি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। একজন মুমিনের কর্তব্য হলো সকল অবস্থায় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে আদর্শ মেনে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য বেঁচে থাকা। আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে তাঁর ইবাদত করে যেতে হবে এবং নিজের চাওয়াগুলো শুধু তাঁর কাছেই পেশ করতে হবে। এরপর আল্লাহ তাঁকে যে অবস্থায় রাখেন, তাতে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কারণ, এতেই রয়েছে বান্দার মঙ্গল, যা আল্লাহ জানেন, বান্দা জানে না।

শয়তান সব সময় বিভিন্ন মানুষের কথা বা নেতিবাচক চিন্তা মনে করিয়ে অশান্তি, অশ্লীলতা বা ভয়ের চিন্তায় মানুষকে প্রভাবিত করতে চায়। এই ওয়াসওয়াসা থেকে মুক্ত হয়ে হেদায়েতের পথে থাকতে হলে চিন্তার জগতে শুধু পরকালকে প্রাধান্য দিতে হবে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে আদর্শ মেনে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবসময় নামাজ, জিকির এবং অন্যান্য আমলে মগ্ন থাকতে হবে।

পাশাপাশি, সকল প্রকার পাপ থেকে দূরে থাকতে হবে এবং আল্লাহর হক ও বান্দার হক যথাযথভাবে আদায় করতে হবে। এভাবে চলতে পারলে সকল পরিস্থিতিতে এবং প্রতি মুহূর্তে শয়তানকে পরাভূত করে হেদায়েতের উপর থাকা সম্ভব হবে। এর ফলস্বরূপ, সকল পরিস্থিতিতে মনে শান্তি বিরাজ করবে।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে শয়তানের ওয়াসওয়াসায় প্রভাবিত না হয়ে চিন্তার জগতে পরকালকে রেখে হেদায়েতের উপর অটল থাকতে পারলে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভ করা যাবে। এর মাধ্যমে জান্নাতের একশটি স্তরের সর্বোচ্চ স্তরে সকল নবী-রাসুলের সাথে অনন্তকাল থাকার সৌভাগ্য হবে।

শয়তানের প্রভাব ও দুশ্চিন্তা কাটিয়ে উঠতে বেশি বেশি ইস্তেগফার-এর আমল করতে হবে। মনে মনে সবসময় আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবু ইলাইহি পড়তে থাকতে হবে।

বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ সুফল হলো:

১. তার যাবতীয় বিপদাপদ দূর হয়।
২. সকল প্রকার দুশ্চিন্তা দূর হয়।
৩. তার ওপর আল্লাহর কোনো আযাব আসে না।
৪. বান্দার সকল দোয়া কবুল হয়।
৫. আল্লাহ তাকে এমন এমন জায়গা থেকে রিজিক দান করেন যা সে কখনো চিন্তাও করেনি।
৬. মৃত্যুর সময় মৃত্যুর ফেরেশতা তার জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসে।
৭. হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, সুসংবাদ তার জন্য যে তার আমলনামায় বেশি বেশি ইস্তেগফার যোগ করেছে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button