ইসলাম ধর্ম

রোগী সেবার মহৎ আমল: ৭০ হাজার ফেরেশতার দোয়া ও জান্নাতের ফলবাগানের সুসংবাদ

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলাম ধর্মে কিছু নেক আমলের গুরুত্ব অপরিসীম, যা পালনকারীকে বিশাল প্রতিদান এনে দেয়। এমনই একটি মহৎ কাজ হলো অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করা বা তার খোঁজখবর নেওয়া। এই আমলকে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন এবং এর সঙ্গে জান্নাতের ফলবাগানে অবস্থানের সুসংবাদ দিয়েছেন।

রোগী দেখতে যাওয়া ব্যক্তিকে আল্লাহর রহমতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রোগীর খোঁজ-খবর নিল, সে আল্লাহর রহমতে ডুবে গেল। আর যখন সে (রোগীর পাশে) বসল, তখন রহমত তার মধ্যে স্থির হয়ে গেল।” (আল আদাবুল মুফরাদ: ৫২২)

অন্য এক হাদিসে এই আমলকে জান্নাতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। মহানবী (স.) বলেন, “যখন কোনো মুসলিম তার অসুস্থ মুসলিম ভাইয়ের সেবায় নিয়োজিত হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফলবাগানে অবস্থান করতে থাকে।” (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৮)

রোগী দেখতে গেলে ফেরেশতারা বিশেষভাবে দোয়া করেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায়, একজন ফেরেশতা তাকে ডেকে বলতে থাকেন, ‘কল্যাণময় তোমার জীবন, কল্যাণময় তোমার এই পথ চলা। তুমি তো জান্নাতে একটি বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নিলে।’” (সুনানে তিরমিজি: ২০০৮)

আরেকটি ফজিলতপূর্ণ হাদিসে নবীজি (স.) আরও বড় সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “কোনো মুসলমান যদি অন্য কোনো মুসলিম রোগীকে সকালে দেখতে যায়, তাহলে ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকেন। যদি সন্ধ্যায় দেখতে যায়, তবে ৭০ হাজার ফেরেশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকেন এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরি হয়।” (সুনানে তিরমিজি: ৯৬৯)

রোগী সেবাকে জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুলুল্লাহ (স.) সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজ কে রোজা রেখেছ?’ আবু বকর (রা.) বললেন, ‘আমি।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজ কে জানাজায় শরিক হয়েছ?’ আবু বকর (রা.) বললেন, ‘আমি।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজ কে দরিদ্রকে আহার দিয়েছ?’ আবু বকর (রা.) বললেন, ‘আমি।’ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজ কেউ কোনো অসুস্থকে দেখতে গিয়েছ?’ আবু বকর (রা.) বললেন, ‘আমি।’ তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘এ কাজগুলো যদি কোনো মানুষের মধ্যে একত্রিত হয়, তাহলে সে অবশ্যই জান্নাতি হবে।’ (সহিহ মুসলিম: ১০২৮)

রোগীর প্রতি অবহেলা না করার বিষয়ে ইসলামে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। সামর্থ্য ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রোগীর সেবা না করলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের ছয়টি অধিকার। এর মধ্যে একটি হলো—যখন কেউ অসুস্থ হবে, তার সেবা করা।” (সহিহ মুসলিম: ২১৬২) তিনি আরও নির্দেশ দেন, “ক্ষুধার্ত ব্যক্তিকে আহার করাও, রোগীর শুশ্রূষা করো এবং বন্দিদের মুক্ত করো।” (সহিহ বুখারি: ৫৩৭৩)

রোগী দেখার ক্ষেত্রে কিছু আদব বা শিষ্টাচার অনুসরণ করা উচিত। এর মধ্যে রয়েছে—রোগীর অবস্থা ও প্রয়োজন সম্পর্কে জানতে চাওয়া, তার কাছে দোয়া চাওয়া এবং আন্তরিকভাবে তার জন্য দোয়া করা। রাসুলুল্লাহ (স.) হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)-কে দেখতে গিয়ে তিনবার দোয়া করেছিলেন, “হে আল্লাহ, আপনি সাদকে সুস্থ করে দিন।” (সহিহ বুখারি: ৫৬৫৯)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button