ইসলাম ধর্ম

পাকা চুল: এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি, ইমানদারের জন্য বিশেষ মর্যাদা

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে, শুভ্র চুল বা পাকা চুল কেবল বার্ধক্যের চিহ্ন নয়, বরং মুমিন ব্যক্তির জন্য এটি গৌরব, সৌন্দর্য এবং বিশেষ মর্যাদার প্রতীক। এটি আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নিয়ামত, যা একজন মুসলিমের জীবনে স্থিরতা ও গাম্ভীর্য এনে দেয়। পাকা চুল মানুষের পরিণত বয়সে উপনীত হওয়ার আলামত এবং সামাজিকভাবেও বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অন্যতম কারণ।

ইসলামে পাকা চুলকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হাদিসের আলোকে, যে মুসলিম ইসলামের ওপর অবিচল থেকে জীবনযাপন করে এবং এই অবস্থায় তার চুল পেকে যায়, অর্থাৎ সে পরিণত বয়সে উপনীত হয়, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ মর্যাদা লাভ করে। এই মর্যাদা হলো: প্রতিটি পাকা চুলের বিনিময়ে তার আমলনামায় একটি করে নেকি লেখা হয়, একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং একটি করে গুনাহ মোচন করা হয়। নিশ্চয় আল্লাহ অতিশয় অনুগ্রহশীল, পরম দয়ালু ও ক্ষমাপরায়ণ।

পাকা চুলের মর্যাদা প্রসঙ্গে দুটি হাদিস নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. প্রথম হাদিস:
আমর ইবনে শুআইব (রা.) তাঁর পিতা থেকে, তিনি তাঁর দাদা আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“পাকা চুল (বা বার্ধক্যের শুভ্রতা) হলো মুমিনের নূর (জ্যোতি)। ইসলামের মধ্যে থেকে কোনো ব্যক্তি যে একটিও চুল পাকায় তার প্রতিটি পাকা চুলের বিনিময়ে তার জন্য একটি করে নেকি লেখা হয় এবং এর দ্বারা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়।” [সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৩১১]

২. দ্বিতীয় হাদিস:
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“তোমরা পাকা চুল উপড়ে ফেলো না। কারণ এটি কিয়ামতের দিন নূর (জ্যোতি)। আর যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে থেকে একটিও চুল পাকায়, তার জন্য এর বিনিময়ে একটি নেকি লেখা হয়, একটি গুনাহ মোচন করা হয় এবং এর দ্বারা তার মর্যাদা এক ধাপ উন্নীত করা হয়।”
[বায়হাকি, শুআবুল ঈমান, ৫/২০৫, হাদিস নং ৬৩৮৭, এবং ইমাম আলবানি এটিকে হাসান বলেছেন, সিলসিলা সাহীহা, হাদিস নং ১২৪৩। আবু দাউদও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন, কিতাবুত তারাজ্জুল, বাব ফী নাতিফিশ শাইব, ৪/৮৫, হাদিস নং ৪২০২]

উপরিউক্ত হাদিসগুলো থেকে আমরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে পারি। তা হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.) এই সম্মানিত প্রতীককে সম্মান করতে শিখিয়েছেন। তিনি মাথা বা দাড়ি থেকে পাকা চুল তুলে ফেলতে নিষেধ করেছেন।

অন্য এক হাদিসে নবী (সা.) এই শুভ্রতাকে লুকিয়ে না রেখে বরং সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে এর প্রতি যত্ন নিতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি হেনা (মেহেদি) এবং কাতাম (এক ধরনের প্রাকৃতিক হলুদ রং) এর মতো উপাদান ব্যবহার করে পাকা চুল পরিবর্তন বা রং করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তিনি কালো রং ব্যবহার করে চুল রং করতে নিষেধ করেছেন। এর মূল কারণ হলো, কালো রং বার্ধক্যকে সম্পূর্ণরূপে গোপন করে ফেলে, যা অন্যকে ধোঁকা দেওয়া বা প্রতারণার শামিল হতে পারে।

হাদিসের এসব নির্দেশনা মূলত বার্ধক্যকে যথাযোগ্য সম্মান জানাতে এবং যারা ইসলামের পথে অবিচল থেকে পরিণত বয়সে পৌঁছেছেন, তাদের উচ্চ মর্যাদার বিষয়টি তুলে ধরেছে।
আল্লাহ আমাদেরকে মৃত্যু পর্যন্ত ইসলামের ওপর জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button