ডেস্ক রিপোর্ট: বিটিভিতে পতিত ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের দোসরদের ধীরে ধীরে অপসারণ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বিটিভির ঢাকা কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন উপকেন্দ্রে বদলি করা হয়েছে। এখনো অনেকে বহাল তবিয়তে আছেন। অনেকে রং বদলে বিএনপি-জামায়াত সেজে রয়েছেন। বিটিভির বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে বিটিভির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রে (সিটিভি) আওয়ামী দোসর, এমনকি ছাত্রলীগ করতেন এমন কর্মকর্তা রয়ে গেছেন। এর মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম কেন্দ্রের (সিটিভি) নির্বাহী প্রযোজক মো. সফির হোসাইন (ইলন সফির), যিনি একসময় লেদার টেকনোলজি কলেজের ছাত্রলীগ শাখার গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। আওয়ামী আমলে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করা এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, ভুয়া বিল-ভাউচার দিয়ে অর্থ উত্তোলনসহ নানা অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২ জানুয়ারি ২০২৫ ইং তারিখে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিটিভির মহাপরিচালককে নির্দেশ প্রদান করা হয়, যার স্মারক নং ১৫.০০.০০০০.০২৩.৩২.০০১.২৪-০৫।
এ প্রেক্ষিতে মহাপরিচালক বিটিভির বর্তমান পরিচালক (অনুষ্ঠান ও পরিকল্পনা) মো. আজগর আলীকে আহবায়ক করে ৩ সদস্যে বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটি দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে গত ২৬ আগস্ট ২০২৫ তারিখে বিটিভির মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। বিটিভির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, তদন্ত কমিটি মো. সফির হোসাইন (ইলন সফির)-এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পায় এবং তার আচরণ ঔদ্ধত্যপূর্ণ, নিজের পদের চেয়ে উচ্চপদস্থ কর্মর্তার জায়গায় স্বাক্ষর করা, পরম্পরাগত বা ধারাবাহিক অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থলোপাট, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদির প্রমাণ পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। বিটিভি কর্তৃপক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। তবে দীর্ঘদিন হয়ে তদন্তে প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তিনি বহাল তবিয়তেই রয়ে গেছেন। তার খুঁটির জোর কোথায়, সেটাই বিটিভিতে প্রশ্ন হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে, সাবেক জেনারেল ম্যানেজার মোছা: মাহফুজা আক্তারের ২১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে মো. সফির হোসাইনকে গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে দুদক থেকে তলব করা হয়েছিল। এই তদন্ত প্রায় শেষের দিকে বলে জানা যায়। উল্লেখ্য, সফির হোসাইনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি এবং জালিয়াতির মাধ্যমে শিল্পীদের ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎসহ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগের সত্যতা তদন্ত কমিটি পেয়েছে। এদিকে, বিটিভিতে স্বৈরাচারের দোসর কর্মকর্তাদের অপসারণ নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। বিটিভি কর্তৃপক্ষ কিছু কিছু পদক্ষেপ নিলেও অনেকেই বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিটিভির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনসহ সর্বত্র নিরপেক্ষ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এমতাবস্থায়, বিটিভিতেও পতিত স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করা জরুরি। ইতোমধ্যে যাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও শেখ হাসিনার তোষামোদী করেছে, তাদের বেশ কয়েকজনকে বিটিভির বিভিন্ন উপকেন্দ্রে কমগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বদলি করা হয়েছে। আরও কিছু চিহ্নিত স্বৈরাচারের দোসর, যারা এখন রং বদলের চেষ্টা করছেন, তারা রয়ে গেছেন। এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে তারা সময়মতো স্যাবোটাজ করতে পারে। তাই যারা চিহ্নিত এবং অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদেরকে অবিলম্বে বিটিভি থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তারা প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা যে মো. সফির হোসাইনের (ইলন সফির) বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে, তারপরও তিনি কী করে বহাল আছেন!



