স্বাস্থ্য ডেস্ক: আপনি কি জানেন, বিশ্বে কোটি কোটি মানুষ প্রি-ডায়াবেটিস অবস্থায় আছেন? প্রি-ডায়াবেটিস মানেই যে আপনার ডায়াবেটিস হবে এমনটা নয়, তবে এটি একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা যে আপনার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি। সঠিক পদক্ষেপ নিলে প্রি-ডায়াবেটিসকে সম্পূর্ণরূপে উল্টে দেওয়া সম্ভব। চলুন জেনে নিই কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা আপনাকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করবে।
১. তরল ক্যালরি সম্পূর্ণ বন্ধ করুন
চিনি মেশানো পানীয় (সফট ড্রিংকস, জুস, ফলের রস ইত্যাদি) আপনার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। এই ধরনের পানীয় থেকে দূরে থাকুন। শুধু পানি, ব্ল্যাক কফি এবং চিনি ছাড়া চা পান করার অভ্যাস করুন। এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
২. প্রতিটি খাবারের পর ১০-১৫ মিনিট হাঁটুন
খাওয়ার পর অল্প সময়ের জন্য হাঁটা রক্তে চিনির মাত্রা ৩০-৪০% পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করে। হাঁটার সময় আপনার পেশিগুলো রক্ত থেকে চিনি টেনে নেয়, ফলে কোষের ক্ষতি কমে আসে। এটি একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকরী অভ্যাস।
৩. প্রতিটি খাবারে পর্যাপ্ত প্রোটিন রাখুন (কমপক্ষে ৪০ গ্রাম)
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রক্তে গ্লুকোজের শোষণ প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। এতে রক্তে শর্করার আকস্মিক ওঠানামা কমে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা (ইনসুলিন সেনসিটিভিটি) বৃদ্ধি পায়। ডিম, মাছ, মাংস, ডাল, বাদাম ইত্যাদি খাবারে প্রোটিন থাকে।
৪. সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন ওজন তোলার ব্যায়াম করুন (স্ট্রেন্থ ট্রেনিং)
এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আপনার শরীরে যত বেশি মাংসপেশি থাকবে, আপনার শরীর তত ভালোভাবে কার্বোহাইড্রেট হজম করতে পারবে। স্কোয়াট, ডেডলিফট, প্রেস, রো-এর মতো বড় বড় মুভমেন্টের ব্যায়ামগুলোতে মনোযোগ দিন। ওজন তোলার ব্যায়াম পেশি তৈরি করে এবং গ্লুকোজ ব্যবস্থাপনার উন্নতি ঘটায়।
৫. শুধু গ্লুকোজ নয়, ফাস্টিং ইনসুলিন টেস্ট করান
বেশিরভাগ ডাক্তার শুধুমাত্র ফাস্টিং গ্লুকোজ এবং A1C পরীক্ষা করেন। কিন্তু ফাস্টিং ইনসুলিন পরীক্ষা আপনার অগ্ন্যাশয় কতটা পরিশ্রম করছে তা নির্দেশ করে। যদি আপনার ইনসুলিনের মান ৫-৭ µIU/mL এর বেশি হয়, তাহলে বুঝতে হবে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স শুরু হয়ে গেছে, এমনকি যদি আপনার গ্লুকোজের মাত্রা “স্বাভাবিক” দেখায়। এই পরীক্ষাটি আপনার শরীরের ভেতরের অবস্থা বুঝতে সাহায্য করবে।
৬. ঘুমানোর কমপক্ষে ৩ ঘণ্টা আগে খাওয়া বন্ধ করুন
রাতে দেরি করে খেলে আপনার ইনসুলিনের মাত্রা উচ্চ থাকে। এই অবস্থায় শরীর ফ্যাট পোড়ানোর পরিবর্তে ফ্যাট জমা করে। ঘুমানোর বেশ কিছুক্ষণ আগে রাতের খাবার শেষ করলে শরীর ফ্যাট পোড়াতে এবং ভালোভাবে বিশ্রাম নিতে পারে, যা ইনসুলিন সেনসিটিভিটির জন্য উপকারী।
প্রি-ডায়াবেটিস কোনো চূড়ান্ত রায় নয় – এটি একটি সতর্কবার্তা। সঠিক জীবনযাপন এবং সচেতনতার মাধ্যমে আপনি এই অবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে পারেন এবং সুস্থ ও সক্রিয় জীবনযাপন করতে পারেন। আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতে!



