নামকরা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যাপক কর ফাঁকির অভিযোগ

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: দেশের খ্যাতনামা চিকিৎসক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ কর অঞ্চল-২৩-এর একজন করদাতা হলেও তাঁর বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ আয় গোপন করে কর ফাঁকি দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তাঁর আয়কর নথি এবং চেম্বারে রোগী দেখার সংখ্যা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত নথি অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ করবর্ষে ডা. দ্বীনের মোট আয় দেখানো হয়েছে সাত লাখ ৪৮ হাজার টাকা, আর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর পরের করবর্ষ, ২০২৪-২৫-এ তাঁর আয় দেখানো হয় সাত লাখ ৫৫ হাজার ৭৩০ টাকা এবং সম্পদ ৬২ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। তবে অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
ডা. দ্বীন মোহাম্মদ এসপিআরসি হাসপাতালে শুক্র ও শনিবার বাদে সপ্তাহের পাঁচ দিন রোগী দেখেন। রোগীর চাপ এত বেশি থাকে যে সিরিয়াল পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তিনি বিকেল ৪টা থেকে শুরু করে কোনো কোনো দিন রাত ১টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে আসা রোগীদের ভিড় সামলাতে তাঁকে প্রায় ২০০ দিন রোগী দেখতে হয়।
জানা যায়, তিনি প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ জন রোগী দেখেন এবং প্রতিটি ভিজিটের জন্য ফি নেন এক হাজার ৫০০ টাকা। এই হিসাবে, শুধুমাত্র রোগী দেখার ফি বাবদ তাঁর দৈনিক আয় দাঁড়ায় ৭৫ হাজার টাকা। যদি তিনি মাসে ২২ দিন রোগী দেখেন, তবে তাঁর মাসিক আয় হয় ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর বছরে ২০০ দিন রোগী দেখলে শুধুমাত্র ফি থেকেই তাঁর বার্ষিক আয় হয় প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা।
রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে ডা. দ্বীন মোহাম্মদ তাদের শমরিতা হাসপাতালে তাঁর অধীনে ভর্তি করান। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা, ভর্তি খরচ, ছোটখাটো অস্ত্রোপচার ও অন্যান্য চিকিৎসা বাবদ রোগীর পকেট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হয়। এই খরচের অন্তত ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ডাক্তার কমিশন হিসেবে পান বলে জানা যায়। এর সঙ্গে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি রোগীর চিকিৎসা, সার্জারি ও পরীক্ষার কমিশন এবং ওষুধ কোম্পানির দেওয়া অর্থ ও উপহার যোগ করলে তাঁর বার্ষিক আয় অনায়াসে তিন কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
এতে স্পষ্টতই বোঝা যায়, এই চিকিৎসকের বার্ষিক আয় ও কর নথিতে দেখানো আয়ের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি টাকার বিশাল পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ, তিনি এই বিপুল পরিমাণ আয় অপ্রদর্শিত রেখে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করছেন।
কর ফাঁকির বিষয়ে জানতে ডা. দ্বীন মোহাম্মদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তাঁর কাছে আয়ের তথ্য গোপন করার বিষয়টি উল্লেখ করে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও তিনি বার্তাটি দেখে কোনো জবাব দেননি।
(সূত্র: কালের কণ্ঠ)



