স্বাস্থ্য ও লাইফস্টাইল ডেস্ক: একান্তে স্মার্টফোনে স্ক্রলিং করা বহু যুবক এবং বিবাহিত পুরুষের মনে একটি গুরুতর প্রশ্ন ঘুরপাক খায়— অতিরিক্ত প – র্নোগ্রাফি দেখলে কি সত্যিই যৌন শক্তি বা ক্ষমতা কমে যায়? একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে চেম্বারে প্রতিদিন আসা হতাশ রোগীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এর সোজাসাপটা উত্তর হলো: হ্যাঁ, অতিরিক্ত প – র্ন আসক্তি পুরুষত্বকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়। এটি কেবল একটি নৈতিক উপদেশ নয়, বরং মস্তিষ্ক বিজ্ঞানের এক কঠিন বাস্তবতা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, যখন একজন ব্যক্তি প – র্নোগ্রাফি দেখেন, তখন মস্তিষ্কে ‘ডোপামিন’ নামক হরমোনের দ্রুত নিঃসরণ ঘটে। এই ডোপামিন হলো আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টিকারী একটি শক্তিশালী রাসায়নিক। জুয়া খেলা বা মাদক সেবনের সময় মস্তিষ্কে যে তীব্র আনন্দের ‘কিক’ অনুভূত হয়, প – র্নে আসক্তির ক্ষেত্রেও ঠিক একই রকম উদ্দীপনা তৈরি হয়।
সমস্যাটি শুরু হয় যখন কেউ প্রতিদিন বা ঘন ঘন এই কৃত্রিম আনন্দের স্রোতে ডুবে থাকেন। মস্তিষ্ক তখন এই অতি-উত্তেজক উদ্দীপনায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, স্বাভাবিক যৌন মিলনের সময়কার স্পর্শ, আবেগ এবং উত্তেজনাকে মস্তিষ্কের কাছে ‘ফ্যাকাসে’ বা ‘নিরুত্তেজক’ মনে হতে থাকে। কারণ, মস্তিষ্ক তখন পর্দার অবাস্তব শারীরিক চিত্র, তীব্র আলো এবং বিকৃত অভিনয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট চরম উদ্দীপনার জন্য অপেক্ষা করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে আসক্তিজনিত একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা হয়।
এই আসক্তির কারণে বাস্তব জীবনের যৌন অভিজ্ঞতা মস্তিষ্কের কাছে আবেদন হারাতে থাকে। জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ও স্বাভাবিক মুহূর্তগুলো একজনের কাছে মূল্যহীন হয়ে ওঠে। এর ভয়াবহ পরিণতি হলো, আসক্ত ব্যক্তি কার্যত নিজের হাতে নিজের সুস্থ যৌন জীবনকে পঙ্গু করে দিচ্ছেন।
আলোচ্য প্রতিবেদনে সমাজের একটি দ্বৈত মানসিকতার দিকও তুলে ধরা হয়েছে। অনেক সময় যারা দিনের বেলায় নারী অধিকার বা সম্মানের কথা বলেন, রাতের অন্ধকারে তারাই প – র্ন সাইটে গিয়ে এমন সব কন্টেন্ট দেখেন, যেখানে নারীদের অবমাননাকর বা অবাস্তবভাবে উপস্থাপন করা হয়।
প – র্নোগ্রাফির দৃশ্যগুলো সম্পূর্ণ সাজানো নাটক এবং একটি কোটি টাকার ব্যবসা। এই শিল্পের ‘অভিনেত্রী’দের শারীরিক গঠন ও অভিনয় বাস্তব জীবনের প্রেমিকা বা স্ত্রীর মতো নয়। এই ইন্ডাস্ট্রি বিকৃত মানসিকতার গ্রাহক তৈরি করে তাদের আসক্তিকে পুঁজি করে চলছে, অথচ দর্শক ভাবছেন তিনি বিনোদন নিচ্ছেন— যা অত্যন্ত হাস্যকর।
চিকিৎসক স্পষ্ট ভাষায় প্রশ্ন তুলেছেন: শরীর, মন ও পুরুষত্ব আপনার। আপনি কি একে পর্দার নীল আলোয় ধ্বংস করবেন, নাকি সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করবেন? লেখকের মতে, কথাগুলো অপ্রিয় হলেও এটাই কঠিন বাস্তব।



