
অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: জমির রেকর্ডে বড় ধরনের অসঙ্গতি দেখা দিলে অনেক সময় প্রকৃত মালিককে বিপাকে পড়তে হয়। বিশেষত, যখন সিএস (CS) এবং এসএ (SA) রেকর্ডে ব্যক্তিগত মালিকানা বহাল থাকলেও সর্বশেষ বিএস (BS) জরিপে তা সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়ে যায়, তখন বহু মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে বৈধ উত্তরাধিকারী কিংবা প্রকৃত মালিক হিসেবে আপনার অধিকার এখনো সুরক্ষিত থাকতে পারে। রেকর্ড সংশোধনের সঠিক আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই জমি আবারও ব্যক্তিগত মালিকানায় ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে ধাপে ধাপে নিম্নলিখিত কাজগুলো করা জরুরি।
প্রথম ধাপ: রেকর্ড যাচাই ও প্রয়োজনীয় প্রমাণ সংগ্রহ
জমির রেকর্ডের ত্রুটি চিহ্নিত করার জন্য প্রথমেই সিএস, এসএ এবং আরএস/বিএস খতিয়ানগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলনা করতে হবে। সিএস অথবা এসএ রেকর্ড অনুযায়ী আপনার মালিকানা প্রমাণের জন্য সকল দলিল (যেমন: রেজিস্ট্রিকৃত দলিল, হেবানামা, বা ওয়ারিশান সনদ), দখলের স্পষ্ট প্রমাণ, নিয়মিত খাজনা পরিশোধের রশিদ এবং পুরোনো দাখিলার মতো গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগ্রহ করা আবশ্যক।
দ্বিতীয় ধাপ: খাস খতিয়ানের কারণ নির্ণয়
বিএস রেকর্ডে আপনার সম্পত্তি খাস খতিয়ান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো নির্ধারণ করা জরুরি। কারণ হতে পারে:
- জমি দীর্ঘদিন অনাবাদি ছিল।
- ওয়ারিশগণ যথাসময়ে নামজারি (মিউটেশন) সম্পন্ন করেননি।
- জরিপকালে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে বা ভুল রেকর্ড তৈরি হয়েছে।
- দখলদার বা মালিকানাস্বত্ব দাবিদার অনুপস্থিত ছিলেন।
এসব পরিস্থিতি চিহ্নিত হলে আপনি ‘ভুল সংশোধন’ (Record Correction) চেয়ে আবেদন করার সুযোগ পাবেন।
তৃতীয় ধাপ: এসি (ল্যান্ড) বরাবর আবেদন
উপজেলা ভূমি অফিস বা সহকারী কমিশনার (ভূমি/এসিল্যান্ড) বরাবর নিম্নলিখিত বিষয়ে আবেদন দাখিল করতে হবে: “বিএস রেকর্ডে ভুলক্রমে অন্তর্ভুক্ত খাস খতিয়ান সংশোধন করে পূর্ববর্তী সিএস/এসএ মালিকানা অনুযায়ী নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন।”
আবেদনের সাথে যে নথিগুলো সংযুক্ত করতে হবে:
- সিএস/এসএ খতিয়ানের কপি।
- মালিকানার মূল দলিল (রেজিস্ট্রেশন/হেবানামা/ওয়ারিশান সনদ)।
- পরিশোধিত খাজনার রসিদ।
- জমির উপর আপনার দখলের প্রমাণস্বরূপ ছবি (যেমন: তালগাছ, বাঁশঝাড়, ঘরবাড়ি বা ফসলের ছবি)।
- স্থানীয় জনপ্রতিনিধির (চেয়ারম্যান) প্রত্যয়নসহ প্রতিবেশীর সাক্ষ্য।
চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপ: তদন্ত, পরিদর্শন ও সুপারিশ
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এসি ল্যান্ড অফিস থেকে একজন সার্ভেয়ার/কানুনগোকে তদন্তের জন্য নিয়োগ করা হবে। তিনি সরেজমিনে জমি পরিদর্শন করবেন, প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলবেন এবং জমিতে আবেদনকারীর প্রকৃত দখল আছে কি না তা যাচাই করবেন। তদন্তে সন্তোষজনক ফল এলে এসি ল্যান্ড অফিস খাস রেকর্ডটি বাতিল করে ব্যক্তিগত মালিকানা রেকর্ড করার সুপারিশ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে।
ষষ্ঠ ধাপ: দেওয়ানি আদালতে মামলা (যদি প্রয়োজন হয়)
যদি কোনো কারণে ভূমি অফিস প্রশাসনিকভাবে রেকর্ড সংশোধনের পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয় বা না নেয়, তবে চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে আপনাকে দেওয়ানি আদালতে ‘ডিক্ল্যারেটরি মামলা’ (Declaratory Suit) দায়ের করতে হবে। এই মামলার মূল বিষয়বস্তু হবে: “আমি এই জমির প্রকৃত মালিক এবং খাস রেকর্ডটি ভুল ও বাতিলযোগ্য।” আদালতের রায় যদি মালিকের পক্ষে আসে, তবে সেই রায়ের অনুলিপি ব্যবহার করে ভূমি অফিসে আবেদন করে নামজারির (মিউটেশন) মাধ্যমে রেকর্ড সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে।



