অপরাধএক্সক্লুসিভদুর্নীতিপ্রশাসনবাংলাদেশসম্পাদকীয়

বেড়া নির্বাচন অফিস: সেবা নয়, যেন ‘ঘুষের আখড়া’; অভিযোগ, টাকা ছাড়া মেলে না কোনো কাজ

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: ঘুষ, দুর্নীতি আর সীমাহীন অনিয়মের এক জাঁকালো আখড়ায় পরিণত হয়েছে পাবনার বেড়া উপজেলা নির্বাচন অফিস কার্যালয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই দপ্তরে অর্থের লেনদেন ছাড়া কোনো প্রকার সেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে ঘুষ চাওয়ার প্রতিবাদে কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের ঘটনা সেখানে নিত্যনৈমিত্তিক।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভোটার কার্ড সংশোধনের মতো সাধারণ কাজেও সেবাগ্রহীতাদের অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। বয়স সংশোধন অথবা নামের বানান ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রেও ইচ্ছামতো মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করা হয়। দাবিকৃত উপঢৌকন (ঘুষ) না দিলে নানা অজুহাতে দিনের পর দিন ঘুরিয়েও কাজ করানো সম্ভব হয়ে ওঠে না।

উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয় থেকে সেবা নিয়েছেন এমন শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বয়স, নাম, বা পিতা-মাতার নাম সংশোধন সংক্রান্ত যেকোন কাজই চলে উৎকোচের মাধ্যমে। প্রত্যাশিত ঘুষ প্রদান করলে এই অফিসে কোনো কাজই যেন আর অসম্ভব থাকে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেড়া উপজেলার এক নাগরিক অভিযোগ করে বলেন, তাঁর ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের জন্য অফিসের কর্মকর্তাদের ২২ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।

বেড়া উপজেলার সাফুল্লাহ পাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম জানান, তাঁর ভোটার আইডি কার্ডে বয়স সার্টিফিকেটের চেয়ে দশ বছর বেশি ছিল। বয়স সংশোধনের জন্য নির্বাচন অফিসে গেলে কর্মকর্তারা তাঁর কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। এই অর্থ দিতে না পারায় তিনি আর কার্ড সংশোধন করতে পারেননি। ফলে বর্তমানে বিভিন্ন কাজে তাঁকে চরম বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে।

উপজেলার বাটিয়াখড়া এলাকার অপর এক ব্যক্তিও জরুরি প্রয়োজনে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে গিয়ে অফিসের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়ের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর লিমন কুমার সরকার গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন, তবে একই সাথে তিনি বলেন, “কারো নিকট থেকে ঘুষ নেওয়ার কোনো প্রমাণ নেই, তবে এবারের মতো ক্ষমা করে দেন।”

তবে বেড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আ. রহিম কার্যালয়ের এই অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তিনি বলেন, এ উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই তাঁকে বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তিনি আরও স্বীকার করেন যে, যেহেতু প্রকাশ্যে ঘুষ চাওয়ার ঘটনায় বাকবিতণ্ডার মতো ঘটনা ঘটেছে, তাই অফিস প্রধান হিসেবে এর দায় তিনি এড়াতে পারেন না। তিনি জানান, অভিযুক্ত লিমন কুমার সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

অন্যদিকে, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বিষয়টি প্রতিবেদকের মাধ্যমে অবগত হন। তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button