অপরাধএক্সক্লুসিভদুর্নীতিদেশনোয়াখালীপ্রতারনাপ্রশাসনবাংলাদেশসম্পাদকীয়

কাজ না করেই ৩ কোটি ৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ; প্রাক্তন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

নোয়াখালী প্রতিনিধি: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক (WASH Block) নির্মাণের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে। একরামুল করিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এই প্রকৌশলী কাজ শেষ না করেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঠিকাদারদের যোগসাজশে ৩ কোটি ৯ লক্ষ টাকার বেশি অর্থ তুলে নিয়েছেন বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, আহসান হাবিব গত ২৮/৫/২০২৩ তারিখে নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। তবে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ঠিক এক বছরের মাথায়, গত ২৮/৫/২০২৪ তারিখে তিনি স্ট্যান্ড রিলিজ হয়ে ঠাকুরগাঁও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই কর্মরত আছেন। নোয়াখালীতে এই এক বছরের মেয়াদে তিনি অসংখ্য অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন।

জানা যায়, ২০২৪ সালের প্রথম দিকে আহসান হাবিব নোয়াখালীর সেনবাগ, কবিরহাট, বেগমগঞ্জ, সদর সুবর্ণচর ও সোনাইমুড়ী উপজেলায় পিইডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় মোট ৫৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক নির্মাণের জন্য ৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কার্যাদেশ (Work Order) প্রদান করেন। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— জেএম এন্টারপ্রাইজ, শাহ জব্বারিয়া কনস্ট্রাকশান, তানভির এন্টারপ্রাইজ এবং সোহরাব-মোজাহার জেবি।

অনুসন্ধানে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী আহসান হাবিবের তত্ত্বাবধানে থাকা ৩টি প্যাকেজের ২৫টি ওয়াশ ব্লকের মোট চুক্তিমূল্য ছিল ৩ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা। কিন্তু তিনি কাজ সম্পন্ন না করেই গত ৫ আগস্টের আগেই বেআইনিভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঠিকাদারদের ৩ কোটি ৯ লক্ষ টাকার বিল পরিশোধ করেন। অভিযোগ উঠেছে, এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হলেও কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটিও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন বা সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। এই মহাদুর্নীতির দায়ভার কে নেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সচেতন মহল।

প্রতিনিধির গভীর অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৫টি ওয়াশ ব্লকের জন্য ধার্যকৃত ৩ কোটি ৯ লক্ষ টাকার মধ্যে বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লকের আংশিক কাজ হওয়ার পর তা বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে সেনবাগ উপজেলার পূর্ব কালিকাপুর এবং নলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তো ওয়াশ ব্লক নির্মাণই করা হয়নি, কিন্তু পুরো বিলই আত্মসাৎ করা হয়েছে। সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব ঠিকাদার মোজাম্মেল হক ও জাবেদের ফার্মের নামে চেক ইস্যু করে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করেন। শুধু তাই নয়, তিনি ঠিকাদারদের সিকিউরিটি পারফরম্যান্স মানি এবং রিটেনশন মানির সম্পূর্ণ অংশও চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। ইতোমধ্যে একজন ঠিকাদার কাজ ফেলে কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন এবং ঠিকাদার মোজাম্মেলও গা ঢাকা দিয়েছেন।

ওয়াশ ব্লক নির্মাণ না হওয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কোমলমতি ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা বর্তমানে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। কতিপয় ঠিকাদার পুরাতন বাথরুম ভেঙে নতুন ওয়াশ ব্লকের আংশিক কাজ করে দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় ছাত্রছাত্রী ও বিশেষত মহিলা শিক্ষিকারা তীব্র দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তারা নিরুপায় হয়ে আশপাশের বাড়িতে গিয়ে বাথরুম ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের ক্ষোভ, এই দুর্ভোগ আর কতদিন চলবে?

নোয়াখালী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের হুগলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুনুর রশিদ এবং কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাবুল জানান, আজ থেকে প্রায় ৩-৪ বছর আগে ঠিকাদাররা বাথরুমগুলো আধা-ভাঙা অবস্থায় ফেলে রেখে চলে গেছেন এবং এরপর আর তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। প্রশাসনে অনেক দেনদরবার করেও ওয়াশ ব্লকের কাজ সমাপ্ত করা যায়নি। তারা দ্রুত ওয়াশ ব্লকের কাজ সম্পন্ন করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button