
নিজস্ব প্রতিবেদক: জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের অনুদানের নামে অর্থ আত্মসাৎ, কর ফাঁকি এবং ৪৩৯ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) চেয়ারম্যান সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়, তার মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালসহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বুধবার (৫ নভেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এই মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন জানিয়েছেন।
অনুমোদিত মামলার আসামিরা হলেন:
১. সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় (সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং সিআরআই চেয়ারম্যান)।
২. সায়মা হোসেন ওরফে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (সিআরআই ট্রাস্টি ও ভাইস চেয়ারম্যান)।
৩. রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক (শেখ রেহানার ছেলে ও ট্রাস্টি)।
৪. আ হ ম মোস্তফা কামাল (সাবেক অর্থমন্ত্রী)।
৫. নসরুল হামিদ (বিপু) (ট্রাস্টি ও সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী)।
৬. শাব্বির বিন শামস (এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর)।
৭. মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া (সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান)।
৮. রওশন আরা আক্তার (সাবেক সদস্য, কর আপীল)।
অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশ করে জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই)’ অনুকূলে ২৩টি কোম্পানি থেকে অবৈধভাবে ৪৫ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে সংগ্রহ করেন। একইসঙ্গে, ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি মোট ১০০ কোটি ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৬ টাকা আয় করে।
অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, সিআরআই কর্তৃপক্ষ ব্যয়ের পরিমাণ হিসেবে ২৯ কোটি ৫০ লাখ ৯৮ হাজার ৯৬ টাকা দেখালেও হিসাব অনুযায়ী তাদের তহবিলে ৭০ কোটি ৮০ লাখ ৪২ হাজার ৩৯০ টাকা থাকার কথা ছিল। কিন্তু তাদের হিসাবে স্থিতি পাওয়া যায় মাত্র ৫৫ কোটি ১১ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৬ টাকা। এর ফলে ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫২১ টাকা আত্মসাৎ হওয়ার প্রমাণ মিলেছে।
এছাড়া, সিআরআইয়ের নামে পরিচালিত ২৫টি ব্যাংক হিসাবে ২৪৭ কোটি ৮৫ লাখ ৩৬ হাজার ১৭০ টাকা জমা এবং ১৯১ কোটি ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৩০৯ টাকা উত্তোলনসহ সর্বমোট ৪৩৯ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন পেয়েছে দুদক।
অনুসন্ধানে আরও অভিযোগ আনা হয়েছে যে, আসামিরা Income Tax Ordinance 1984 অনুযায়ী আইন ভঙ্গ করে ৩৬ লাখ ৫২ হাজার ৭৪২ টাকা আয়কর প্রদান না করে সরকারের আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছেন। আত্মসাৎকৃত এই অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, অভিযুক্তরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে কর সুবিধা গ্রহণ, অনুদান আত্মসাৎ এবং অর্থপাচারের মাধ্যমে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা রুজুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।



