অপরাধআইন ও বিচারএক্সক্লুসিভচট্টগ্রামদেশপ্রশাসনবাংলাদেশমিডিয়াসম্পাদকীয়

হাকিম হত্যা রহস্য উদঘাটন ৬ জন গ্রেপ্তার, বিপুল অস্ত্র উদ্ধার

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী মডেল থানাধীন মদুনাঘাট এলাকায় সংঘটিত চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও সহযোগীদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই সাথে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গুলি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার জনাব মো. সাইফুল ইসলাম সানতু, বিপিএম-বার-এর নির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এবং হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে এই সাফল্য অর্জন করে।

গত ৭ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে সকালে ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম তার নিজ প্রাইভেটকারযোগে হামিম এগ্রো ফার্মে যান। বিকেলে চট্টগ্রাম শহরে ফেরার পথে মদুনাঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশে পৌঁছালে মোটরসাইকেলযোগে আসা অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা তার গাড়ির সামনে এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হলেও পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

ঘটনার পর জেলা গোয়েন্দা শাখা ও হাটহাজারী থানা পুলিশ প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দ্রুত তদন্ত শুরু করে।

  • গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৩১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে রাউজান থানাধীন বাগোয়ান ইউনিয়নের গরীব উল্লাহ পাড়া এলাকা থেকে মো. আব্দুল্লাহ খোকন (প্রকাশ লেংড়া খোকন/আমান উল্লাহ)-কে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং পরবর্তীতে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
  • খোকনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত মো. মারুফ-কে গ্রেপ্তার করা হয়। মারুফের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়, যা অপর আসামি মো. সাকলাইন হোসেনের হেফাজতে ছিল।
  • পরবর্তীতে ৪ নভেম্বর ২০২৫ রাতে জেলা গোয়েন্দা শাখা ও হাটহাজারী থানার একটি বিশেষ দল রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. সাকলাইন হোসেন-কে গ্রেপ্তার করে। তার হেফাজত থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি একনলা বন্দুক, একটি এলজি এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
  • আদালতের অনুমতিক্রমে পুলিশ রিমান্ডে মারুফ, জিয়া ও সাকলাইনের দেওয়া তথ্যমতে, ৯ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া চৌধুরীহাটের আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়িতে জেলা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে হাকিম হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৪টি বিদেশি পিস্তল, ১টি রিভলবার, ১টি চায়না রাইফেল, ১টি শর্টগান, ৪৯ রাউন্ড রাইফেলের গুলি (৭.৬২), ১৭ রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ, ১৯ রাউন্ড পিস্তলের গুলি (৭.৬৫), ৭টি ম্যাগজিন, ২টি দেশীয় রামদা, ১টি রকেট ফ্লেয়ার, ৫০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২৫০ গ্রাম গাঁজা (আনুমানিক) এবং ৯৬,০০০ নগদ টাকাসহ আরও ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ পর্যন্ত এই হত্যা মামলায় মোট ৬ জন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। পুলিশের তদন্তে হাকিম হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ডসহ বাকি আসামিদের পরিচয়ও শনাক্ত করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জবানবন্দি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাউজান থানাধীন বালুমহলের নিয়ন্ত্রণ এবং স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন:

১। মো. আব্দুল্লাহ খোকন ওরফে লেংড়া খোকন ওরফে আমান উল্লাহ (পিতা: সলিমুল্লাহ, মাতা: নুরজাহান বেগম, সাং: গরীব উল্লাহ পাড়া সলিম উল্লাহ চৌধুরীর নতুন বাড়ি, ০৩ নং ওয়ার্ড, ১৪ নং বাগোয়ান ইউপি, থানা: রাউজান)।
২। মো. মারুফ (পিতা: মো. হারুন, মাতা: সাজু আক্তার, সাং: নোয়াপাড়া কুজি আলীর বাড়ি, ০৫ ওয়ার্ড, ১৩ নং নোয়াপাড়া ইউপি, থানা: রাউজান)।
৩। জিয়াউর রহমান (পিতা: হাজী দলিল উর রহমান, মাতা: ফরিদা বেগম, সাং: পাচখাইন, থানা: রাউজান)।
৪। মো. সাকলাইন হোসেন (পিতা: মো. ইকবাল হোসেন, মাতা: শামীমা আক্তার, সাং: পালোয়ান পাড়া, সালেহ ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ি, মোকার দিঘীর পাড়, ০৬ নং ওয়ার্ড, ১৩ নং নোয়াপাড়া ইউপি, থানা: রাউজান)।
৫। মো. সাকিব (পিতা: মৃত মো. শওকত, মাতা: দিলুয়ারা বেগম, ঠিকানা: আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়ি, চৌধুরীহাট, নোয়াপাড়া, থানা: রাউজান)।
৬। শাহেদ (পিতা: সোবহান ওরফে শহর মুলুক, মাতা: নাসিমা বেগম, ঠিকানা: আইয়ুব আলী সওদাগরের বাড়ি, চৌধুরীহাট, নোয়াপাড়া, থানা: রাউজান)।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার-এর নির্দেশনায় নোয়াপাড়া, চৌধুরীহাট ও আশপাশের এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন, পুলিশি টহল, বিশেষ অভিযান এবং রাত্রিকালীন সাঁড়াশি তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশের সমন্বিত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button