অপরাধঅব্যাবস্থাপনাপ্রশাসনসম্পাদকীয়সিলেট

সিলেটে সরকারি খাস জমি দখলের মহোৎসব

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত খাদিম নগর এলাকায় সরকারি খাস জমি ও বন্দোবস্তকৃত চা বাগানের জায়গা অবৈধভাবে জবরদখল ও বেচাবিক্রির মহোৎসব চলছে। স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র এই কাজে জড়িত রয়েছে, যারা দিনের পর দিন নির্বিচারে পাহাড়, বন ও টিলা কেটে উজাড় করে দিচ্ছে। এই ঘটনাটি ঘটেছে সিলেট সদর উপজেলার শাহ পরান থানাধীন ৩৪ নং ওয়ার্ড এলাকার বিআইডিসি বহর কলোনির অভ্যন্তরে, বহর ও খাদিম নগর মৌজার সংরক্ষিত অঞ্চলে।

অভিযোগ অনুযায়ী, বহর মৌজা (জেএল নং ৭০) এবং খাদিম নগর মৌজার (জেএল নং ৭১) অধীনে থাকা সরকারি খাস জমি, খাদিমনগর চা বাগানের ইজারাভুক্ত এলাকা, পাহাড়, বনভূমি, টিলা, পতিত জঙ্গল, ছড়া-নালা, খাল, গোপাট এবং সাইল (কৃষি) শ্রেণির ভূমি অবৈধ দখলের শিকার হচ্ছে।

জানা যায়, ভূমি দখলের এই সিন্ডিকেটে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতা ও বহিরাগত কিছু মানুষ জড়িত। তারা সংঘবদ্ধভাবে জমি ভাগ-বাটোয়ারা করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের দলিল বা ‘সোলেনামা’ তৈরি করছে। এরপর তারা বিভিন্ন আদালতে মামলা দায়ের করে, এবং মামলা চলাকালীন সময়েই নিজেদের নামে বস্তি বা আবাসিক এলাকা তৈরি করে জায়গাটি দখল করে নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, দখলকৃত এই সরকারি খাস জমি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে বিক্রিও করা হচ্ছে। অনুমোদন ছাড়াই পাহাড় ও টিলা কেটে প্লট তৈরি করে সেখানে ফাঁকা ওয়ালের বিল্ডিং ও টিনের ঘরবাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।

সম্প্রতি সাবেক সরকার পতনের পর গত কয়েক মাস ধরে এই দখল বাণিজ্য আরও তীব্র হয়েছে। এতে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বহর কলোনির বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম (পিতা- মৃত নামর আলী), মানিক (পিতা- ফেননদী), সুজন (পিতা- হায়দার আলী), আইয়ুব আলী মহরীল (পিতা- মৃত মখরম আলী), উছমানী গনী হুমায়ূন (পিতা- আব্দুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী), উছমানী আলী মহরীল (পিতা- মৃত জগির উল্লা), হাতিম আলী গাজী (পিতা- মৃত মেহের আলী গাজী), কয়েছ মিয়া (পিতা- মৃত রুস্তুম আলী), শেখ রহিম বাদশা ও আনোয়ার হোসেন গং-দের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, এঁরাই সকলে মিলে সরকারি খাস জমি ও চা বাগানের ইজারাভুক্ত জায়গা জবরদখল করে প্লট তৈরি এবং বেচাবিক্রি করছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও এই অবৈধ দখল ও বেচাবিক্রির বাণিজ্য থামছে না। তারা অনুমোদন ছাড়াই নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশন ও অপরাধ বিচিত্রা সিলেট জেলা শাখা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা অবিলম্বে এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সিলেট জেলা প্রশাসক, এসিল্যান্ড, ইউএনও এবং পরিবেশ অধিদপ্তর মহোদয়দের বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button