অপরাধএক্সক্লুসিভচুয়াডাঙ্গাবাংলাদেশসম্পাদকীয়

আলমডাঙ্গায় বসতবাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট: কোর্টের আদেশ অমান্য করে সন্ত্রাসী বাহিনীর তাণ্ডব

নিজস্ব প্রতিবেদক: পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এবং জমি নিয়ে চলমান বিরোধের সূত্রে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নারায়ণপুরে এক বসতবাড়িতে পরিকল্পিত হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসীদের হামলায় নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুট হয়েছে এবং ৪ থেকে ৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদেরকে স্থানীয় মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী মরহুম আমানত মন্ডলের ছোট ছেলে আব্দুল মতিন (৪৮)। তার বাড়ি নারায়ণপুর, পোস্ট: জামজামি বাজার, থানা: আলমডাঙ্গা, জেলা: চুয়াডাঙ্গা। আব্দুল মতিনের অভিযোগ, একই গ্রামের ১০ জনের একদল সন্ত্রাসী এই হামলা চালিয়েছে।

অভিযুক্ত হামলাকারীরা হলেন: ১. বাবুল (৩৭), পিতা: মৃত তোরাব আলি, ২. মো. দুলু, পিতা: মৃত মনির উদ্দিন, ৩. মো. ইজাজুল, পিতা: মৃত গোলাপ মন্ডল, ৪. মো. দুখু মিয়া, পিতা: মতিয়ার রহমান, ৫. মো. মাসুদ, পিতা: মো. দুলু, ৬. মো. টেংরা, পিতা: মৃত তুরাপ আলি, ৭. মো. তুতা, পিতা: মো. টেংরা, ৮. মো. তিতু, পিতা: মো. পচা, ৯. ঋতু, পিতা: মো. বাবুল এবং ১০. মো. পচা, পিতা: মৃত তুরাপ আলী। অভিযুক্তরা সকলেই একই গ্রামের বাসিন্দা।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মরহুম আমানত মন্ডলের রেকর্ডভুক্ত সম্পত্তিতে আনুমানিক ৭০ বছর ধরে তার পরিবার শান্তিতে বসবাস করে আসছিলেন। আমানত মন্ডলের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী, ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ে ওয়ারিশ সূত্রে জমির দাবিদার হন। এই ওয়ারিশদের মধ্যে জমির ভাগাভাগি নিয়ে মনোমালিন্য সৃষ্টি হলে পার্শ্ববর্তী বাড়ির এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি সুযোগ বুঝে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে।

জানা যায়, এই গোষ্ঠীটি কোর্টের আইন অমান্য করে মাঝেমধ্যেই মারামারি ও জমি দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে আব্দুল মতিন গত ০৬/০৪/২০২৫ ইং তারিখে মহামান্য আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৪৫(১) ধারা অনুসারে মামলাটি (পিটিশন নং ২৬১/২৫ খ্রিষ্টাব্দ, স্মারক নং ৬৯৪) বিজ্ঞ আদালতে নথিভুক্ত হয়। মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় ডিবি পুলিশকে এবং তদন্ত রিপোর্টে আব্দুল মতিনের পক্ষেই রায় দেওয়া হয়।

তবে মামলার রায় পক্ষে আসার পরেও সন্ত্রাসীদের ভয়ে আব্দুল মতিন তার পরিবার নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আলমডাঙ্গা থানায় অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। উল্টো ন্যায়বিচারের পরিবর্তে স্থানীয় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সঞ্জিত এবং জামজামি পুলিশ ফাঁড়ির এসআই রোকন মামলার বাদী পক্ষকে নানাভাবে হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ।

এমতাবস্থায়, নিরুপায় হয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আব্দুল মতিন গত ১১/১১/২০২৫ ইং তারিখে সিনিয়র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, এই সন্ত্রাসী গ্রুপের মূল জোগানদাতা ও হুকুমদাতা হলেন একই গ্রামের মরহুম গোলাপ মন্ডলের ছেলে মো. মতিয়ার রহমান (৬০)। তার সঙ্গে নারায়ণপুরের আরও কয়েকজন দুষ্কৃতকারী, লম্পট ও ভাড়াটিয়া কিলার বিভিন্ন সময়ে এই ডাকাত গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগ দিয়ে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে মারামারিতে লিপ্ত হয়। তাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রের খবর, এই দুর্বৃত্তরা এক সময় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতিবাজ নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানি করত। বর্তমানে তারা প্রশাসনিক সহযোগিতায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আঁতাত করে জমি দখল, পান চুরি, ছাগল চুরি, গরু চুরি, যমুনার মাঠে ডাকাতি, ঘোষ বিলার ব্রিজে ডাকাতি এবং ছিনতাইয়ের মতো অপরাধমূলক কাজ প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাচ্ছে।

ভুক্তভোগী আব্দুল মতিনকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামিরা হুমকি দিচ্ছে, অন্যথায় তাকে জানে মেরে ফেলার ভয় দেখানো হচ্ছে। উপরন্তু, এসআই রোকন আব্দুল মতিনকে থানায় এসে আসামিদের সাথে আপোস করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিদ্যমান বেআইনি, জবরদস্তি মূলক কর্মকাণ্ডের কোনো সমাধান হচ্ছে না।

এলাকাবাসী উক্ত জবর দখলকারী ও সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button